সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বিজ্ঞানের (Science) পাঠ্যসূচি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ। শুক্রবার দুর্গাপুরের (Durgapur) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ‘বিজ্ঞান, দর্শন ও শিক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক আলোচনাচক্রে যোগ দেন। সেখানেই তিনি পাঠ্যসূচি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন।
বিকাশবাবু বলেন, ‘‘কী পড়ছে ছেলেরা? উত্তমকুমারের ক’টা ভাই ছিল? অত্যন্ত দুঃখের। শিক্ষার আসল ও মুখ্য উদ্দেশ্যই এখানে বিতরণ হচ্ছে না। কেউ বিজ্ঞান পড়তে চায় না। পয়সা নেই তো। মার্কেটিং, ইলেকট্রনিক্স পড়তে চায়। বিজ্ঞানের ভিতরেও যে একটা অপূর্ব ছন্দ ও সৌন্দর্য আছে, এটা যদি মানুষ বুঝতে পারে, তবে মানুষ শান্তিতে মরবে।’’
[আরও পড়ুন: ‘জানতাম আমায় খুনের ছক হয়েছে’, জাতির উদ্দেশে ভাষণে বিস্ফোরক ইমরান]
মানুষের মূল আনন্দ দুটি জিনিসে, বিজ্ঞান ও কবিতা। একথাও এদিন উল্লেখ করেন পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত বিকাশবাবু। তিনি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, কী করে ঝটপট ডিগ্রি হাসিল করে টাকা রোজগার করব। আমার এক বন্ধুর কথায় সব ‘কুলি’ তৈরি হচ্ছে।’’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) লেখা ‘বিশ্বপরিচয়’ বইটি প্রাথমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান বিকাশ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘এই বইটি আমি বহুবার চেষ্টা করেছি স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে আনতে। সব রাজনীতি। সিপিএমের আমল থেকে চেষ্টা করেছিলাম। হয়নি।’’
বর্তমান শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা ও আবেগ নেই, তাই পড়ুয়ারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও এদিন এনআইটিতে এমনই দাবি করলেন দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিজ্ঞান চেতনার আসল গভীরতা ছিল তাঁর মননে বলে অনুষ্ঠানে তিনি মত ব্যক্ত করেন। এই অনুষ্ঠানে এসে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সেই কথাই বোঝালেন অধ্যাপক ও পদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ।
[আরও পড়ুন: গুলি বের করতে একাধিক অস্ত্রোপচার, কেমন আছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান?]
দুর্গাপুরের বহু বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের সামনে কবিগুরুর ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ গানটি বাজিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই গানেই বলা আছে ভুবন দোলে কথাটি। ভুবন যে দোলে তা নিয়েই গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক রজার পেনরোজ।’’ অধ্যাপক সিংহের ব্যাখ্যা, ‘‘পৃথিবী তো বটেই সমস্ত গ্রহ, গ্রহাণু, নক্ষত্রপুঞ্জও নিজের অক্ষে কিন্তু দুলছে। এটা একটা দোদুল্যমান কম্পন বা অসিলেটিং মুভমেন্ট। এটা থেমে গেলেই সমস্ত কিছুকে গিলে খাবে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল।’’ রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান চেতনার ব্যাখ্যা দিয়ে বিকাশবাবু বলেন, ‘‘তোমরা ছাত্রছাত্রীরা রবীন্দ্রনাথকে ভাল করে পড়বে। আজ আমি যা বললাম তার কুড়ি শতাংশও যদি তোমরা ভাল করে বুঝে থাকো, তাহলে আমার ভীষণ ভাল লাগবে।’’ এদিন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনআইটি-র নির্দেশক অনুপম সিনহা।