সুমিত বিশ্বাস ও অমিত সিং দেও, পুরুলিয়া ও মানবাজার: আতঙ্ক নয়। ২০১৮ সালের ঝাড়গ্রামের লালগড়ের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা আর নেই। বরং ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের ঘরছাড়া বাঘিনী জিনাত এখন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড় বনাঞ্চলের 'অতিথি'! জঙ্গলে বনজ সম্পদ কুড়াতে গেলে পাহাড়বাসীর হাতে থাকছে শুধু লাঠি, সেটা আত্মরক্ষার্থে। তবে অবশ্যই দলবদ্ধভাবে তাঁরা যাচ্ছেন জঙ্গলে। ভাবখানা এমন যে 'রয়্যাল বেঙ্গল টাইগ্রেস' এই পাহাড়-জঙ্গলেই স্থায়ীভাবে থেকে যাক। তাতে সমৃদ্ধ হবে এই বনাঞ্চল। রাইকা পাহাড়তলির গ্রামগুলির মানুষজন বলছেন, এই এলাকায় সংগ্রাম করেই তারা বেঁচে আছেন। তাই বাঘিনী হামলা না চালালে ও নিজের মত থাকুক। তাঁরা নিজেদের মত জীবন-জীবিকায় জঙ্গলে যাবেন। এই বার্তা যেন পরিবেশ ভারসাম্যের। আসলে বণ্যপ্রাণ বাঁচাতে পুরুলিয়ায় যেভাবে বনদপ্তর সচেতনতার প্রচার চালিয়েছে তারই সুফল!
শুধু পর্যাপ্ত জলের অভাব ছাড়া বণ্যপ্রাণ আশ্রয়ের উপযুক্ত এই রাইকা পাহাড়। তাই এখানে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ ট্র্যাপ ক্যামেরা বসালে নেকড়ে ধরা পড়ে। এছাড়া বন্য শূকর, হরিণ তো রয়েইছে। তাই বান্দোয়ানের উদলবনি গ্রামের বাসিন্দা যিশুনাথ মান্ডি বলেন, "বাঘিনী তার মতো থাকুক। আমরা আমাদের মতো থাকব। ওই বাঘিনী যদি আমাদের কোনও ক্ষতি না করে তাহলে আমরা কেন করব? ওই বাঘিনী আমাদের 'অতিথি'। তাছাড়া আমাদের তো সংগ্রাম করেই বাঁচতে হয়। ফলে বাঘিনীকে ঘিরে আমাদের কোনও আতঙ্ক নেই।"
বাঘিনীর আতঙ্ক উপেক্ষা করতে দলবদ্ধভাবে জঙ্গলে যাচ্ছেন মানুষজন। আত্মরক্ষায় হাতে শুধু লাঠি। নিজস্ব চিত্র।
'বাঘবন্দি'র টোপের জন্য রাইকা পাহাড় লাগোয়া কেশরা গ্রামের বাসিন্দা কমল মুর্মু বনদপ্তরের কথামতো দুটো শূকর বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে একটি ছাগল। তাঁর কথায়, "বনদপ্তর বলল, তাই পোষ্য শূকর বিক্রি করে দিলাম। ছাগলও বিক্রি করে দিয়েছি। বনদপ্তরের কাছ থেকেই শুনছিলাম যে বাঘিনী ২ দিন কিছু খায়নি। তাই আমরা তার খাবারের জন্য শূকর ও ছাগল বিক্রি করে দিলাম। বাঘিনী ভালোভাবে খেয়ে বেঁচে থাকুক।" বনদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৯ সাল নাগাদ এই পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পদচারণা ছিল। পায়ের ছাপও মিলেছিল। যা দেখে বনদপ্তর বুঝতে পারে, ওই বাঘটি পুরুষ। তবে তা নিয়ে কোনও হইচই হয়নি। এবার পুরুলিয়ায় যেমনটা হচ্ছে জিনাতকে নিয়ে।