সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শীতের ভোরে রাস্তায় পড়ে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন। গ্রামবাসীরা অপরিচিত যুবককে ওইভাবে পড়ে থাকতে দেখে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই যুবক কিছুই বলতে পারছিলেন না। তখন ভিলেজ পুলিশের মাধ্যমে থানায় খবর যায়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকা ট্রেনের টিকিট ও মোবাইলের সূত্র ধরে ওই যুবককে ঘরে ফেরাল পুলিশ। শুক্রবার পরিবারের লোকজন ওই যুবককে নিয়ে বাড়ি উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আঠাশ বছর বয়সি ওই যুবকের নাম সূর্যকুমার সিং। বাড়ি বিহারের আরা জেলার অজ্ঞায়বাজার থানার ইয়ার গ্রামে। তিনি গুজরাটের রাজকোটে টাইলস তৈরির কারখানা কর্মরত। মাস দুয়েক আগে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন। কয়েকদিন পর কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছননি। ঘুরতে ঘুরতে গত ২১ নভেম্বর চলে আসেন পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার শাঁকারি গ্রামে। তাঁকে শীতের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের সন্দেহ হয়। ভেবেছিলেন অসুস্থ। ওই যুবক কথাও বলতে পারছিলেন না। তখন ভিলেজ পুলিশকে গ্রামবাসীরা জানান। ভিলেজ পুলিশ খণ্ডঘোষ থানায় খবর দেয়। পুলিশ এসে ওই যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। শীতে কাঁপতে থাকায় তাকে গরম দুধ খাইয়ে ধাতস্থ করা হয়। ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কোনও জবাব মিলছিল না তার কাছ থেকে। চিকিৎসককে দিয়ে তাঁর শারীরিক পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়।
[রঘুনাথপুরে গুলিতে হত স্কুল শিক্ষক, খুনের কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা]
পরে তাঁর কাছ থেকে ট্রেনের একটি টিকিট পায় পুলিশ। মোবাইলও পায়। তখন পুলিশের তরফে ওই যুবকের বাড়ির নম্বরে ফোন করা হয়। কিন্তু এক মহিলা ফোন ধরে ভোজপুরি ভাষায় কথা বলায় সমস্যা হয়। এরপর পুলিশের তরফে টিকিটে থাকা জায়গার নাম দেখে সেখানকার থানায় যোগাযোগ করে বিষয়টি জানানো হয়। সেখানকার থানা থেকে ওই যুবকের বাড়িতে যোগাযোগ করা হয়। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে সূর্যকুমারের দাদা সঞ্জিতকুমার সিং ও আত্মীয় বিজুকুমার মেহতা ও আরও এক আত্মীয় খণ্ডঘোষে থানায় আসেন। যুবকের পরিচয়পত্র-সহ অন্যান্য প্রমাণপত্র দেখান তাঁরা। পুলিশের তরফে বৃহস্পতিবার রাতে পরিজনদের হাতে ওই যুবককে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু রাতে ফেরার সমস্যা হওয়ায় এলাকারই একটি বাড়িতে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
যুবকের দাদা সঞ্জিতবাবু জানান, গ্রামবাসী ও পুলিশকে ধন্যবাদ। তাঁদের চেষ্টাতেই ভাইকে ফিরে পেলেন বলে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, তাঁর ভাই সম্প্রতি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তাই কর্মস্থলে যাওয়ার বদলে এখানে এসে পড়েন।
[খুনের হুমকি দিচ্ছেন থানার আইসি! অভিযোগে সরব মহকুমা শাসক]
