নন্দন দত্ত, বোলপুর: শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা (Poush Mela Shantiniketan) নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেল। শনিবার বিশ্বভারতীর সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠক ভেস্তে গেল। কারণ শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকলেও সেই বৈঠকে উপস্থিতই থাকলেন না খোদ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। জেলাশাসক বিধান রায় উপাচার্যকে ফোন করেছিলেন। সে ফোনও ধরলেন না তিনি।
প্রায় এক ঘন্টা পর বৈঠক না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বের হয়ে যান জেলাশাসক ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ-সহ অন্যান্যরা। যাওয়ার আগে মহকুমা প্রশাসনকে ক্ষুদ্ধ জেলাশাসক জানিয়ে যান, বিশ্বভারতীর (Visva-Bharati University) কোনও কাজে সহযোগিতা নয়। কোনও মেসেজের উত্তর দেবেন না। মন্ত্রী, জেলা প্রশাসন, বোলপুর পুরসভা, শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের নিয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান করে ই-মেল মারফৎ চিঠি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। যার জেরে বন্ধ হতে চলা পৌষমেলা নিয়ে ক্ষীণ আশা তৈরি হয়েছিল।
বিশ্বভারতীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি ও কবিগুরু হস্তশিল্প সমিতির সদস্যরা। আর শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠেই পৌষমেলা হবে কিনা এই বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মহল। ওই বৈঠককে কেন্দ্র করে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখেছিলেন হস্তশিল্পীরা। বিশ্বভারতীর ডাকা বৈঠকে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পৌঁছে যান মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলাশাসক বিধান রায়, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার বোলপুর সুরজিৎ কুমার দে, বোলপুরের মহকুমা শাসক অয়ন নাথ, এসডিপিও বোলপুর নিখিল আগরওয়াল, শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ, বোলপুর পুরসভার তিন কাউন্সিলার-সহ জেলার আধিকারিকরা। ছিলেন অগ্নি নির্বাপন বিভাগের কর্মীরাও। যদিও বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি মেলার উদ্যোক্তা শান্তিনিকেতন ট্রাস্টকে।
[আরও পড়ুন: ‘শুভেন্দুর দ্বারা হবে না, তাই মিঠুনকে এনেছে BJP’, দাবি কুণাল ঘোষের]
বৈঠকে বিশ্বভারতীর কর্মী পরিষদ ও রেজিস্ট্রার-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত হননি খোদ উপাচার্য। জেলাশাসক বিধান রায় জানান, উপাচার্য বৈঠক ডেকে নিজেই অনুপস্থিত থাকলেন। ফোন ধরারও সৌজন্যবোধ দেখাননি। পরে দু’জন পুলিশ আধিকারিককে উপাচার্যের বাসভবনে পাঠানো হলে তাঁদের জানানো হয়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি বৈঠকের উপস্থিত থাকতে পারছেন না। অথচ উপাচার্যের কাজের ধরন দেখে অনেকে আশা করেছিলেন হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপাচার্য বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। নাহলে অবস্থানরত ছাত্র-ছাত্রীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মেলা ভেস্তে দেবেন।
উপাচার্য কারও ফোন ধরেননি। প্রশাসকরা জানান বিষয়টি নিয়ে তাঁদের ভাবতে হবে এবং পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উপাচার্যের এমন আচরণে চরম ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। উপাচার্যের নিরাপত্তাহীনতার প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, “যেখানে মন্ত্রী, জেলাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-সহ পুলিশ বাহিনী আছে। সেখানে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ অমূলক ও ভিত্তিহীন।” তবে পৌষমেলা প্রসঙ্গে ক্ষুদ্র, কুটির মাঝারি ও বস্ত্রশিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানান, মেলা করতে চান না উপাচার্য। তাই অজুহাত দরকার ছিল তাঁর। ভবিষ্যতেও মেলা নিয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। ডাকবাংলোর মাঠে বিকল্প পৌষ মেলা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়ে দেন।
শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট এর অনিল কোনার বলেন, “শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের মেলা হলেও বৈঠকে ডাক পাননি তাঁরা। নানা টালবাহনার পর বৈঠকে সমাধান সূত্র বের হবে আশা করেছিলাম। কিন্তু এদিনের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় পূর্বপল্লী মাঠে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল শান্তিনিকেতনের মেলার।”