সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সরেই গেলেন পুরুলিয়ার (Purulia) পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি। ভেঙে দেওয়া হল পুরুলিয়া পুরবোর্ড। পুরুলিয়া পুরসভায় আর কোনও পুর প্রতিনিধি বা কাউন্সিলর থাকলেন না। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে মহকুমাশাসক (সদর) উৎপলকুমার ঘোষ।
মঙ্গলবার বিকালে রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক বিভাগ থেকে পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার-সহ জেলাশাসকের কাছে আদেশনামা আসতেই নিজের কার্যালয়ে পুর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মহকুমাশাসক। ওই বৈঠক থেকে পরিষ্কার উঠে আসে এই পুরশহরের আবর্জনা, পানীয় জল ও আলো। এই তিনটি কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রশাসক মহকুমাশাসকের পুর ইনিংস শুরু হবে বলে পুরুলিয়া (Purulia) মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এদিনের বৈঠক থেকে পুর আধিকারিকদেরকে তা পরিষ্কার করে দেন প্রশাসক। তবে এই বিষয়ে জেলাশাসক মহকুমাশাসক ও পুরসভার আধিকারিকরা একটি কথাও বলতে চাননি। বোর্ড ভেঙে যাওয়ায় হতাশা গ্রাস করে পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালির ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা করে আসা শাসকদলের কাউন্সিলররা। কারণ, আর পুর জনপ্রতিনিধি থাকলেন না। এদিকে বিজেপি এই ঘটনায় হাইকোর্টে যাচ্ছে বলে খবর। তবে হাইকোর্টে গেলেও তা ধোপে টিকবে না বলে পুরুলিয়া পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কারণ, বোর্ড অব কাউন্সিলরের বৈঠকে রেজিউলেশনের সিদ্ধান্ত হয় পরিষেবা দিতে পারছিল না এই বোর্ড। কাউন্সিলররা ওই বৈঠকে নিজেদের ব্যর্থতার কথা কার্যত স্বীকার করে নেন। নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক বিভাগকে জেলাশাসক যে তদন্তের রিপোর্ট দিয়েছেন সেই তদন্তের রিপোর্টেও পুর গাফিলতি স্পষ্ট বলে রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক মহকুমা শাসক উৎপলকুমার ঘোষ।
এদিন রাতের দিকে বিদায়ী পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, "পুরপ্রধান প্রশাসনিক পদ হলেও সবটাই আমাদের দলের বিষয়। দল আমাকে পুরপ্রধান করেছে। দল যা বলবে সেটা মেনে চলতে হবে। আমি দলের অনুগত সৈনিক।" গত নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখ রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক বিভাগ এই পুরসভাকে পুর উদাসীনতার বিষয়ে শোকজ করে। এক, সাফাই হয় না ও বেহাল নিকাশি দুই, অনিয়মিত জল সরবরাহ, তিন, আবর্জনা পড়ে থাকে। ওই শো-কজের ভিত্তিতে পুরুলিয়ার পুরপ্রধান বৈঠক ডাকলেও সেই বৈঠক বিশেষ কারণে স্থগিত হয়ে যায়। তারপর ২৬ নভেম্বর তিনি বৈঠক না ডেকেই শো-কজের চিঠির উত্তর দিয়ে দেন। কিন্তু ২৭ নভেম্বর রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক বিভাগ পুরসভাকে ই-মেইল করে জানায়, বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠক ডাকতে হবে।
সেই সঙ্গে শো-কজের চিঠি যে সকল কাউন্সিলর গ্রহণ করেছেন তার প্রমাণপত্র দিতে হবে। তারপর তড়িঘড়ি ১ ডিসেম্বর বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু পুরপ্রধানের ডাকা ওই বৈঠকে শাসকদলের কাউন্সিলররা গরহাজির হওয়ার কথা জানিয়ে দিলে রাজ্য তৃণমূলের নির্দেশে রীতিমতো হুইপ জারি করে শাসকদলের সকল কাউন্সিলরকে সেই বৈঠকে পাঠানো হয়। বৈঠক শেষে ১ ডিসেম্বর রাতের দিকে শো-কজের চিঠি পাঠান পুরপ্রধান। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর জেলাশাসকের তরফে তদন্তে আসেন পুরুলিয়া (সদর) মহকুমাশাসক উৎপলকুমার ঘোষ।
