সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কয়লা-গরু পাচার কাণ্ডে এ রাজ্যের একের পর নেতা, মন্ত্রীদের তলব, জেলযাত্রা হয়েই চলেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে বীরভূম, বর্ধমানের বিপুল কয়লা (Coal) সাম্রাজ্য সামলানোর দায়িত্ব যাঁর উপর, দুর্গাপুরের সেই মাফিয়া রাজু ঝা কেন এখনও ইডি (ED)কিংবা সিবিআইয়ের (CBI) ডাক পেল না? এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল কয়লা কাণ্ডে যুক্ত অনেকের মনেই। তবে জানা যাচ্ছে, সোমবার অর্থাৎ ৩ এপ্রিল রাজুকে ইডি তলব করেছিল দিল্লির অফিসে। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, শনিবার কলকাতায় এসে রাত কাটাবেন। রবিবার সন্ধের বিমানেই দিল্লি যাবেন, সোমবার হাজিরা দেবেন ইডি দপ্তরে। কিন্তু তার আগেই খুন রাজু! এই তথ্যে আরও ঘনীভূত শক্তিগড়ে শুটআউট (Shootout) রহস্য।
জানা গিয়েছে, এর আগেও একবার কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআই জেরার মুখে পড়েছিলেন রাজু ঝা। আবার ৩ এপ্রিল তাঁকে দিল্লির (Delhi)ইডি অফিসে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই শনিবার শুটআউটে প্রাণ হারালেন দুর্গাপুরের কয়লা মাফিয়া। এনিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিজেপি সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বলেন, ‘‘CBI ডেকেছিল, নিশ্চয়ই বড় নাম বলেছে, তাই খুন করা হল।” প্রথমবার সিবিআই জেরায় রাজু কী বলেছেন, কী বলেননি, তা অজানা। তবে ইডির সামনে কিছু বলার আগে পরিকল্পনা করে রাজুকে সরিয়ে দেওয়া হল, তা একপ্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা।
[আরও পড়ুন: শক্তিগড়ে হত্যাকাণ্ড: ছিল এক গাড়িতেই, শুটআউটের আগেই দ্রুত নেমে ভিড়ে মেশে ‘ফেরার’ লতিফ]
ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, শনিবার সন্ধেবেলা দুর্গাপুরে (Durgapur) কয়লা ব্যবসায়ী আবদুল লতিফের বিলাসবহুল হোটেল ‘পুষ্পাঞ্জলি’তে লতিফ এবং রাজু একসঙ্গে দেখা করে। তারপর সেখান থেকে লতিফের গাড়িতেই তাঁরা কলকাতার দিকে রওনা দেয়। একইসঙ্গে যে গাড়িতে দুষ্কৃতীরা রাজুকে গুলি করে, সেই গাড়িটিও একই জায়গা থেকে লতিফদের গাড়ির পিছু নেয়। আততায়ীদের পরিকল্পনা ছিল, যেখানে রাজুর গাড়ি থামবে, সেখানেই গুলি করা হবে। সাধারণত গাড়িতে কোথাও গেলে রাজু মাঝে কোথাও গাড়ি থামাতেন না। কিন্তু শনিবার কেন গাড়ি শক্তিগড়ে থামানো হল? এই প্রশ্ন ঘুরছে তদন্তকারীদের মাথায়। তবে সবচেয়ে বড় রহস্য ঘনাচ্ছে, ইডি দপ্তরে হাজিরার আগে ঠিক কোন উদ্দেশে খুন করা হল রাজু ঝা’কে, তার কারণ ঘিরে।
[আরও পড়ুন: ‘CBI ডেকেছিল, নিশ্চয়ই বড় নাম বলেছে, তাই খুন’, শক্তিগড়ে কয়লা মাফিয়া খুনে বিস্ফোরক দিলীপ]
রবিবার সন্ধে নাগাদ ফরেনসিক দল পৌঁছয় শক্তিগড়ের সেই অকুস্থলে। সেখান থেকে তারা মোট ১৩টি গুলির খোল উদ্ধার করেছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান। এই মুহূর্তে ১২ সদস্য়ের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) এই ঘটনার তদন্ত করছে। সিটের প্রধান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিজি, ট্রাফিক-সহ শীর্ষ আধিকারিকরা সকলেই।