সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: রাম নিয়ে রাজনৈতিক টানাটানি! এবছর রামনবমীতে (Ram Navami 2025) তারই সাক্ষী রইল বাংলা। একদিকে যেমন অস্ত্র হাতে রাস্তায় নেমে বাহুবল প্রদর্শনে উদগ্রীব গেরুয়া শিবিরের নেতারা, উলটোদিকে শাসকদলের নেতানেত্রীরা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা করেছেন। বার্তা দিয়েছেন সম্প্রীতির। রবিবার সকাল সকাল বীরভূমে মিছিলে নামে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সাংসদ শতাব্দী রায়, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীরা নেতৃত্ব দিলেন মিছিলে। শিলিগুড়িতে রামপুজোয় অংশ নিলেন মেয়র গৌতম দেব। হুগলির চুঁচুড়ায় কীর্তনের দলের সঙ্গে মিছিল করলেন বিধায়ক অসিত মজুমদার। অন্যদিকে, কলকাতায় রামমন্দিরে পুজো দেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। কলকাতা লাগোয়া ভাঙড়ে আবার রামনবমীর মিছিলে অংশ নিলেন তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। ছাব্বিশের আগে রামনবমীর মতো উৎসব বেশ ভালোভাবেই উদযাপন করল শাসক শিবির।
অস্ত্রের ঝনঝনানি নয়, শান্তি-সম্প্রীতির বার্তা দিতে কীর্তনের দল নিয়ে রবিবার পথে নামলেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। সেখানে রাম, সীতা বেশে দু'জনকে দেখাও গেল সেখানে। অসিত মজুমদারের কথায়, ''আমাদের মিছিলে কোনও অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখতে পাবেন না। আমাদের মিছিল মানুষের মাঝে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেবে। হিংসা করে কোনও সামাজিক উন্নয়ন হয় না। দেবতাদের কাছে নতজানু হয়ে, সমাজকে সুস্থ রাখার, সমস্ত মানুষকে ভালো রাখার আশীর্বাদ নিতে হয়। অস্ত্র দিয়ে ঝনঝনানি করে নয়।''
শ্রীরামপুরে হনুমানজির পুজো সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব ছবি।
শুধু বিধায়ক নয়, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এবার সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেন রামনবমীতে। রবিবার প্রথমে শ্রীরামপুরে বিবি দে স্ট্রিটে হনুমানজির পুজো করলেন তিনি। অঞ্জলি দিয়ে তিনি চাঁপদানির একাধিক মন্দিরে হনুমানের মূর্তিতে মালা দিয়েও পুজো করেন তিনি। সেখানেই সাংসদের মুখে শোনা যায় 'রামনাম'। এনিয়ে শুভেন্দুকে 'নন্দীগ্রামের গুন্ডা' বলে আক্রমণ করেন কল্যাণ।
রাঙা মাটির বীরভূমে অবশ্য সকাল থেকে রামনবমী উদযাপন শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথমে সিউড়িতে শতাব্দী রায়ের মিছিল, দুপুরে বোলপুরে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ ত্রিশূল হাতে রাস্তায় নামলেন। শামিল হলেন মিছিলে। সকলের মুখে শোনা গেল শান্তি, সম্প্রীতির বার্তা। কাজল শেখের বক্তব্য, জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রামনবমী পূজায় অংশগ্রহণ করেছে সকলে, তিনিও ব্যতিক্রম নন। ছাব্বিশের আগে এই জেলায় বিজেপি-তৃণমূলের রাজনৈতিক লড়াই যথেষ্ট চড়া সুরে বাঁধা। তার মাঝে দু'পক্ষের রামনবমী পালন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বোলপুরে ত্রিশূল হাতে রামনবমীর মিছিলে কাজল শেখ। নিজস্ব ছবি।
কলকাতার ঠনঠনিয়ায় পাশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে রামনবমীর মিছিলে হাঁটলেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ''এই বাংলা সবসময় উৎসবের পক্ষে। যে যার ধর্ম পালন করবে, কিন্তু উৎসব সবার জন্য। আমরা তাই সবাইকে নিয়ে আজ মিছিলে নেমেছে। এটাই বাংলার আসল ছবি।''
ঠনঠনিয়ায় মিছিল তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের।
অন্যদিকে, ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক শওকত মোল্লা আগেই রামনবমী উপলক্ষে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তিনিও মিছিলে হাঁটবেন। রবিবার সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। ভাঙড়ে তিনি মিছিলে শামিল হলেন। বললেন, ''ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বিজেপি অশান্তি ছড়াতে চায়। আর আমরা চাই, সকলে শান্তিতে উৎসব পালন করুন, কোনও বিভাজন না রেখে। আজ সেই ছবিই দেখবে বাংলা।''