shono
Advertisement

ছাত্রীরাই পুরোহিত! সরস্বতী পুজোর আগে প্রশিক্ষণ পুরুলিয়ার এই কলেজে

এবছর এই পুজোর প্রধান পুরোহিত বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অন্বেষা মণ্ডল।
Posted: 12:29 PM Feb 13, 2024Updated: 02:05 PM Feb 13, 2024

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগেকার কথা। নিজেদের কলেজের সরস্বতী পুজোয় (Saraswati Puja) প্রথম পুরোহিত হয়েছিল ছাত্রীরাই। সেই সময় ঘরে-বাইরে কম কথা শুনতে হয়নি। রীতিমত অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করে বিদ্ধ করা হয়েছিল ছাত্রী-সহ এই মহিলা কলেজকে। কিন্তু দমে যায়নি পুরুলিয়া (Purulia) শহরের নিস্তারিণী মহিলা মহাবিদ্যালয়। আজও কলেজের ছাত্রীরাই সরস্বতী পুজোর মাঙ্গলিক আচার ও রীতি মেনে পুজো করে আসছে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ষোড়শ উপাচারে মৃন্ময়ী মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে ধ্যান মন্ত্র, পঞ্চদেবতা স্মরণ-সহ সব কিছুই নিষ্ঠাভরে করতে গত এক মাস ধরে চলছে প্রশিক্ষণ। অতীতে কলেজের দায়িত্বে থাকা পুরোহিতের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মোট ১০ ছাত্রী। যাতে বিশুদ্ধ উচ্চারণে সঠিকভাবে পুজো করতে পারে।

Advertisement

এ বছর সরস্বতী পুজোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ১০ জন। নিজস্ব চিত্র।

ফি বছরের মত এবারও নিস্তারিণী কলেজের ছাত্রীরাই করবেন সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja 2024)। ছাত্রী নিবাসের প্রার্থনাগৃহে পুরোহিত (Priest) ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ চলছে। একেবারে হাতে-কলমে চলছে শিক্ষা। এই মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী দেব বলেন, “মেয়েদের কলেজে মেয়েরাই সমস্ত পুজোর আয়োজন করে। সাজিয়ে তোলা থেকে বিসর্জন। সবটাতেই তাদের উপস্থিতি থাকে। তাহলে কেন তারা পুজো করবে না? বাড়িতে তো মেয়েরাই পুজো করে। এই ভাবনা থেকেই ২০০৬ সাল থেকে আমাদের এই কাজ চলছে। ওই সময় নানান কথা শুনতে হয়। এমনকি অবজ্ঞাসূচক কথাবার্তা বলা হয়। আমরা চাই যে পেশাগুলোতে মেয়েরা নেই, সেখানেও মেয়েরা আসুক। আমরা কলেজের মেয়েদের এটাই শেখাই, যেটা করবে সেটা ভালো করে করবে। অতিথিকে চা দিয়ে আপ্যায়ণ করাই হোক বা দেবীর কাছে পুজো। বিশুদ্ধ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে এই পুজোপাঠ মেয়েরা খুব ভক্তি সহকারে করে থাকে। কোনওরকম সমস্যা হয় না। কারণ আমাদের কলেজে সংস্কৃত পড়ানো হয়।”

[আরও পড়ুন: রেশন দুর্নীতি মামলায় শহরে অভিযান ইডির, সল্টলেক-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি]

তবে পুজোপাঠে শুধু যে সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রীরাই থাকে তা কিন্তু নয়। অন্যান্য বিভাগের ছাত্রীরাও আনন্দের সঙ্গে শামিল হয়ে পুজো পাঠে অংশ নেয়। পুজোয় যেমন তন্ত্রধারক থাকে, তেমনই থাকেন মূল পুরোহিত। সহায়কের ভূমিকা পালন করে একাধিক ছাত্রী। এই কলেজের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করা বর্তমানে পুজোপাঠের প্রশিক্ষক ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্রীরা খুব নিষ্ঠা সহকারে পুজো করে। উচ্চারণই মূল বিষয়। সেই কাজটাও সঠিকভাবে করে থাকে তারা। প্রায় একমাস ধরে এই প্রশিক্ষণ চলছে।” অর্থাৎ যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। এই প্রবাদ নিস্তারিণী মহিলা মহাবিদ্যালয়ে একেবারে হুবহু সত্য। এই পুজোর তন্ত্রধারক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ঋতুপর্ণা তন্তুবায়। সহায়ক রয়েছে মোট আটজন। প্রধান পুরোহিত বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অন্বেষা মণ্ডল। তাঁর কথায়, “গত বছর আমি এই কাজে যুক্ত ছিলাম। তাই আমি এবার প্রধান পুরোহিত। এই কাজ আমরা একেবারে ভক্তি ভরে করি। একটা আলাদা অনুভূতি হয়।”

[আরও পড়ুন: প্রয়াত ওয়ার্নকে কড়া টক্কর! দেখে নিন ভাইরাল হওয়া নতুন ‘বল অফ দ্য সেঞ্চুরি!’]

এই মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মায়ের নামাঙ্কিত এই কলেজ জেলার একমাত্র মহিলা মহাবিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জুড়ে রয়েছে নানা গৌরবের অধ্যায়। বাবা ভুবনমোহন দাশ ও মা নিস্তারিণী দেবীর বসবাসের জন্য এই বাড়িটি কিনেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। নিস্তারিণী দেবী পরবর্তীকালে এই ভবনেই দেহত্যাগ করেন।

নিস্তারিণী মহিলা কলেজে জোরকদমে চলছে শাস্ত্রপাঠ। নিজস্ব ছবি।

স্ত্রীর মৃত্যুর ৭ মাস পরে কলকাতায় ভুবনমোহন মারা যান। তাঁর চিতাভস্ম এনে সহধর্মিনীর সমাধির পাশে রাখা হয়। যা এখনও কলেজ চত্বরে দুটি সমাধি পাশাপাশি রয়েছে। ১৯৫৬ সালে নভেম্বর মাসে পুরুলিয়া বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হলে রাজ্য সরকার এক লক্ষ টাকায় এই ভবন কিনে দেশবন্ধুর মায়ের নামে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। এই কলেজে পা রাখেন ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়-সহ অনেক গুণীজন। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই লাল পাড় গরদের শাড়ি পরে ছাত্রীরাই পুরোহিতে অবতীর্ণ হয়ে ‘নয়া ঐতিহ্য’-র ধারা বহন করে চলেছে এই মহাবিদ্যালয়। যা আগামী দিনে ইতিহাসও!

দেখুন ভিডিও:

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার