সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: সুষ্ঠুভাবে রামনবমী পালনে তৎপর রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যজুড়েই আজ কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। সতর্ক পুলিশ। রবিবার এলাকাভিত্তিক নজরদারি চালাতে ২৯ জন আইপিএস অফিসারকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ড্রোনেও চলবে নজরদারি। বেআইনি মিছিল করলে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। নির্দিষ্ট কয়েকটি রুটেই একমাত্র যাবে রামনবমীর মিছিল। একই সঙ্গে রাজ্যের দশটি জেলা ও পুলিশ কমিশনারেটকে সংবেদনশীল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আসানসোল, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ জেলা ও জেলার কমিশনারেটগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে পাঁচটি বড় মিছিল। এই মিছিলগুলি শুরু হবে এন্টালি, পিকনিক গার্ডেন, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, হেস্টিংস, কাশীপুর থেকে। প্রত্যেকটি মিছিলেই থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ। রবিবার হলেও রামনবমীতে নবান্নে খোলা ডিজি কন্ট্রোল রুম। চলবে নজরদারি। থাকবেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম।
রাজ্যজুড়ে আড়াই হাজারের বেশি মিছিল হবে। প্রতিটি মিছিলই থাকবে পুলিশের ঘেরাটোপে। মিছিলে শিশুদের হাতে অস্ত্র রয়েছে কি না তা নজরে রাখবে শিশু সুরক্ষা কমিশন। শনিবার মুখ্যসচিব বৈঠক করেন কলকাতা ও হাওড়ার পুলিশ কর্তাদের বড়বাজারে। ক্যানিং স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। উল্লেখ্য, গত বছর রামনবমীতে শহরে ৬০টি মিছিল হয়েছিল। এবার মিছিলের সংখ্যাও আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিন পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, এবার ৮০টি মতো মিছিলের আবেদন জমা পড়েছে। একই সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে প্রশাসন সতর্ক, পুলিশি টহল সঙ্গে। ইতিমধ্যেই অবশ্য ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত পুলিশ কর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শনিবার উত্তর কলকাতার কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা।
পুলিশ কমিশনার বলেন, "মিছিলের রুটগুলি দেখা হয়েছে। সংগঠকদের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশমতো রামনবমীতে মিছিল করতে হবে। সকলে উৎসবে আনন্দ করবে। একই সঙ্গে দেখতে হবে অন্যের সমস্যা যাতে না হয়।" একইসঙ্গে অস্ত্র নিয়ে যাতে মিছিল না হয় বা মিছিলে কারও হাতে অস্ত্র না থাকে, সেই ব্যাপারে নজর থাকবে পুলিশের। প্রত্যেকটি মিছিলের রুট, বিশেষ করে বড় মিছিলের রুটে থাকবে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। সিসিটিভির মনিটরে নজর রাখবে পুলিশ। এছাড়াও পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের পোশাকের সঙ্গে বডি ক্যামেরাও থাকবে। যদি কোনও সমস্যা হয়, ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হাওড়ার শিবপুর জি টি রোডে রামনবমীর মিছিলের উপর নজরদারি রাখতে ১০টি ড্রোন ওড়াবে পুলিশ। পাশাপাশি রাজ্যে রামনবমী যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয় সে জন্য রাজভবনের তরফেও রাজ্য সরকারকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজভবন একটি পিস রুম চালু করেছে।
এদিকে, রামনবমী নিয়ে বিজেপির উসকানি চলছেই। বিজেপি নেতাদের হুমকিও অব্যাহত। অস্ত্র নিয়ে মিছিল হবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন দিলীপ ঘোষ থেকে শুভেন্দু অধিকারীরা। বাধা পেলে মাড়িয়ে দিয়ে চলে যাওয়া হবে হুমকি দিয়েছেন দিলীপ। আবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শনিবার সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট ও ভিডিও বার্তায় রামনবমীতে পুলিশি সক্রিয়তা নিয়ে চড়া সুরে বলেছেন, "রামনবমীতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু রাস্তায় নামবে। আমিও থাকব। শান্তিপূর্ণভাবে রামনবমী পালন করুন। প্রশাসনকে বলব উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। কিন্তু কড়াকড়ি করে রামনবমী বন্ধের চেষ্টা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।"
শনিবার দুপুরে সাঁকরাইলে অস্ত্র-তরোয়াল নিয়ে রামনবমীর একটি মিছিল বেরোয় সিংহ বাহিনী সংগঠনের উদ্যোগে। সাঁকরাইলের রাজগঞ্জ গঙ্গার ঘাট থেকে মানিকপুরের রামমন্দির পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এই মিছিল হয়। অস্ত্র হাতে কয়েক হাজার লোক মিছিলে হাঁটেন। রামনবমীর আগেই শনিবার গেরুয়া শিবিরের উদ্যোগে অস্ত্র নিয়ে মিছিল হয়েছে একাধিক জায়গায়। এদিকে, রামনবমীকে সামনে রেখে যেভাবে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে বিজেপি তার কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "রামনবমীকে যারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে সেই পদ্ধতির বিরোধিতা করেছি। রামনবমী পালন খালি বিজেপি করে নাকি?" কুণালের বক্তব্য, "আদালতের নির্দেশ অমান্য করে যারা বেরিয়েছেন, সবটাই মানুষ দেখছে। এত শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। খালি রামনবমী ঘিরে অশান্তি হয় কেন? কারণ বিজেপি প্ররোচনা দেয়।” বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের আয়োজনে মিছিলেই মূলত বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা অংশ নেবে। বিজেপির পতাকা নিয়ে মিছিলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে দলের তরফে।
এমনকী, যেখানে সম্ভব সেখানে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতেও বলা হয়েছে। আজ, কলকাতাতেই ৪৩টি মিছিল বের করার কথা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। আবার গেরুয়া ছাত্র সংগঠন এবিভিপি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রামনবমী পালন করতে চেয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য অনুমতি দেয়নি। রামনবমী উপলক্ষে সতর্ক রয়েছে রেল পুলিশ। ট্রেনে অস্ত্র বহন করলে গ্রেপ্তার করা হবে। এদিকে, শনিবার রানাঘাটে ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠে রামনবমী উদযাপন কমিটির অনুষ্ঠানে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে শুধু আজ রবিবারই নয়, টানা এক সপ্তাহ ধরে রামনবমীর কর্মসূচি পালন করবেন শুভেন্দু।