নন্দন দত্ত, সিউড়ি: সমাবর্তন উৎসবে যোগ দিতে বঙ্গে উড়ে এসেছেন রাষ্ট্রপতি। মঙ্গলবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তিনি। তবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu) শান্তিনিকেতন যাওয়ার আগেই তাল কেটেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণের অভিযোগ তুলে, তাঁর অপসারণের দাবিতে খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। তা লিখেছেন বিশ্বভারতীর একদল অধ্যাপক, আশ্রমিক, সমাজের বিশিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। কয়েকঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সেই চিঠির জন্য শাস্তির খাঁড়া নেমে এল বিশ্বভারতীর (Vishva Bharati) ‘বিদ্রোহী’ অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে। ৭ জনকে শোকজ করল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবারের মধ্যে শোকজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সকালই শোকজের (Showcasue) চিঠি পেলেন অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, কৌশিক ভট্টাচার্য, তথাগত চৌধুরী, অরিন্দম চক্রবর্তী, শরৎ কুমার জানা, সমীরণ সাহা, রাজেশ কে ভি। এঁরা সকলেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক। এঁদের মধ্যে আবার বেশ কয়েকজনের মাথার উপর ঝুলছে সাসপেনশনের নোটিস।
[আরও পড়ুন: DA’র দাবিতে ধর্মঘটে শামিল হওয়ায় শোকজ, ‘হ্যাপি শোকজ ডে’ পালন করে জবাব ধর্মঘটীদের]
ভিবিইউএফএ অর্থাৎ বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের সংগঠনের বিবৃতি অনুযায়ী, ”রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীতে মাননীয়া রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাচ্ছে। একইসঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছে বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলে এই প্রতিষ্ঠান এক উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যার ফলে ন্যাক ও এনআরএফআই র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বভারতীর বিরাট অবনতি ঘটেছে। বিশ্বভারতীর সব অংশের মানুষদের বিশেষত ফ্যাকাল্টিদের যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে তাতে এই প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমেছে মামলার পাহাড়; তার কোনওটাতে বিশ্বভারতীকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, কোনওটাতে বলা হয়েছে উপাচার্যর পক্ষপাতমূলক মানসিকতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে মানানসই নয়, বরং তা নিচ মানসিকতার পরিচায়ক। প্রায় প্রতিটা মামলায় বিশ্বভারতী হেরেছে, এবং ছাত্র-কর্মী-অধ্যাপকের অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। উপাচার্যের রোষানলের বলি হয়েছেন দলিত ছাত্র-অধ্যাপিকা। মামলার পিছনে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও অবহেলিত রয়েছে অ্যাকাডেমিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। বহু ছাত্র, কর্মী, অধ্যাপককে শোকজ, সাসপেন্ড, বরখাস্ত, মিথ্যা তদন্ত, আদালত অবমাননা ইত্যাদির মাধ্যমে গোটা বিশ্বভারতী সমাজকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে। শেষত, রাষ্ট্রপতিকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে একই মাসের ব্যবধানে দু’বার সমাবর্তন করতে গিয়ে বিরাট অর্থব্যয় হচ্ছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন রক্ষনাবেক্ষনে বিপুল অর্থঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে তাড়াহুড়ো ও অপরিকল্পিত এই সমাবর্তন করতে গিয়ে ২৮.০৩.২০২৩ তারিখের সেমেস্টার পরীক্ষা নিরাপত্তার কারণে বাতিল করতে হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘আমি মিলির জন্য সুপারিশ করেছি’, বাম আমলের ‘স্বজনপোষণ’ নিয়ে বিস্ফোরক প্রাক্তন বামনেতা]
মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জের জহরবেদীতে সমাবর্তন অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রপতির সেখানে পৌঁছনোর কথা ১২টা নাগাদ। কিন্তু তার আগেই শান্তিনিকেতনে যে অশান্তির মেঘ ঘনাল, তা মোটেই কাম্য নয় বলে মত শিক্ষামহলের একটা বড় অংশের।