গোবিন্দ রায়: প্রায় ১৩ মাস জেলবন্দি সন্দেশখালির বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। এখনও তিনি জেলে বসেই ফোনে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। সন্দেশখালির ন্যাজাট থানার অন্তর্গত সরবেড়িয়া অঞ্চলের একটি পরিবারের দাবি, ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেছে বলে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন শাহজাহান-সহ তার সাগরেদরা। আতঙ্কে কার্যত ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন ওই পরিবারের সদস্যেরা।

সন্দেশখালির পুরাতন সরবেড়িয়া এলাকায় বাড়ি মণ্ডল পরিবারের। সরবেড়িয়ার মোড়ে ‘শেখ শাহজাহান মার্কেট’ নামে যে বড় বাজারটি রয়েছে, সেটা ওই পরিবারের জমির উপর তৈরি বলে দাবি। মণ্ডল পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের জায়গা দখল করে ওই বাজার তৈরি করেছিলেন তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা। জমি ফেরানোর দাবিতে ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগও করে ওই পরিবার। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বাজারে অভিযানও চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এখনও সেই মামলা ঝুলে আছে।
মণ্ডল পরিবারের অভিযোগ, দিন দুয়েক আগে শাহজাহানের ‘অনুগামী’ মফিজুল মোল্লা ফোন করেন তাদের। ফোনটি ধরেন পরিবারের কর্তা রবীন মণ্ডল। তখন ‘কনফারেন্স কল’-এ শাহজাহান (Shahjahan Sheikh) তাকে হুমকি দেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তারপর থেকেই আতঙ্কিত রবীনরা। তিনি বলেন, "মফিজুল মোল্লা শাহজাহানের অনুগামী। শাহজাহানের মাছের আড়তে কাজ করত। মফিজুল হঠাৎই বলে, ‘ভাই ফোন করেছে, কথা বল।’ আমি তখন ফোন ধরে বলি, ‘কে বলছেন?’ ফোনের উলটো দিক থেকে বলে, ‘আমি শেখ শাহজাহান বলছি।’ তারপরে বলে, ‘খুব বাড় বেড়েছিস। তোরা মার্কেট নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করছিস। তোদের বাড়িঘর ভাঙচুর করব। বোমাবাজি করে দেব। বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ করে দেব।" মণ্ডল পরিবারের বয়স্কা সদস্য শিখা মণ্ডল বলেন, "ফোনে হুমকি দেওয়ার পরে আমরা আতঙ্কে আছি। বাড়ির গেটে তালা বন্ধ করে বসে আছি। প্রতিবেশীদের দিয়ে বাজারহাট করাচ্ছি। আমরা এর সুরাহা চাই।" অন্যদিকে, যার ফোন থেকে রবীনের কাছে ফোন এসেছিল, সেই মফিজুল জানিয়েছেন, ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, "আমার সঙ্গে কারও কথা হয়নি।"
গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। তার কয়েক দিন পরে সন্দেশখালিতে শাহজাহান, তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন স্থানীয়দের বড় অংশ। সন্দেশখালির কয়েকজন মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ করেন শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওই বিতর্ক পরে রাজ্য রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারী নির্যাতন, জমিদখল, মাছের ভেড়ির লিজ়ের টাকা না দেওয়ার মতো বিভিন্ন অভিযোগে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি পথে নামে। যদিও প্রথম থেকে নারী নির্যাতনের বিষয়টি সাজানো বলে দাবি করে তৃণমূল। ঘটনাক্রমে গ্রেপ্তার হয়েছেন শাহজাহান (Shahjahan Sheikh) এবং তার কয়েকজন অনুগামী। এখনও জেলবন্দি তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত ন্যাজাট থানায় কোনওরকম অভিযোগ দায়ের হয়নি।