দেব গোস্বামী, বোলপুর: রাত পোহালেই শান্তিনিকেতনে শুরু ঐতিহ্যবাহী পৌষউৎসব। বিশ্বভারতীর কর্মীমণ্ডলীর উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে প্রথা মেনে অংশ নেবেন ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, প্রাক্তনী, প্রবীণ আশ্রমিক-সহ অন্যরা। মঙ্গলবার থেকে পূর্বপল্লির মাঠে শুরু হচ্ছে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। জেলার পুলিশ প্রশাসনের আঁটোসাটো নিরাপত্তায় ২৩ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা। ইতিমধ্যেই বোলপুর-শান্তিনিকেতনের হোটেল, লজ, রিসোর্ট ও হোমস্টেগুলিতে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়েছে। যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক প্রশাসন।
মেলার মাঠ পরিদর্শনে পুলিশ।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩০০টি স্টলের প্লট বুক হয়েছে। তবে রাত্রের মধ্যেই সংখ্যা বেড়ে ১৫০০ থেকে ১৭০০-তে পৌঁছবে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্লাস্টিক বর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। বিশ্বভারতীর অধিকর্তা অমিত হাজরা জানান, “স্টল বুকিংয়ে ভালো সাড়া মিলেছে। দমকলের জন্য মাঠে অতিরিক্ত জায়গা রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” ছয় দিন ধরে মেলা প্রাঙ্গণের বিনোদন মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিল্পীদের অংশগ্রহণে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। নিরাপত্তা ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বোলপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় জানান, "বোলপুর পুরসভা, টোটো ইউনিয়ন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহরের প্রায় দশটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টোটোর রেট চার্ট টাঙানো হবে। পৌষমেলাকে সামনে রেখে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপিছু ভাড়া ১৫ টাকা ধার্য করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে কোনও বাইক বা গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। নির্দিষ্ট পাশ থাকলেই নির্ধারিত রুটে যাতায়াতের অনুমতি মিলবে। অভিযোগ জানানোর জন্য থাকছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও একাধিক ড্রপ গেট।"
বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল জানান, "অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও ও ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকদের নেতৃত্বে প্রায় ২৫০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে থাকছেন মহিলা পুলিশ, র্যাফ, সাদা পোশাকের পুলিশ, অ্যান্টি-ক্রাইম টিম ও বিশেষ উদ্ধারকারী দল। নিরাপত্তা নজরদারিতে বোলপুর-শান্তিনিকেতন জুড়ে স্থায়ী প্রায় ২০০টি সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে আরও ৩০০টি অস্থায়ী ক্যামেরা। পাঁচটি উচ্চমানের ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হবে। মেলায় থাকছে ৩৬টি পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র, ১০টি ওয়াচ টাওয়ার এবং আটটি ড্রপ গেট। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য চালু করা হয়েছে চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কর্নার। শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা এড়াতে তাদের গলায় অভিভাবকের ফোন নম্বর সংবলিত কার্ড ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রবীণ ও শারীরিকভাবে অক্ষম দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে পুলিশের টোটো পরিষেবা ও জরুরি অ্যাম্বুলেন্স।"সব মিলিয়ে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষউৎসব ও পৌষমেলাকে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
