রমেন দাস: শীর্ষ আদালতের কলমের খোঁচায় চাকরিহারা প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী। রুটিরুজি হারিয়ে দিশাহীন তাঁরা। এসএসসি (SSC) চাকরিহারাদের হাহাকারে ভারী হয়েছে বাতাস। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, কীভাবে সংসার চলবে? কীভাবে মিটবে ঋণ? অবিবাহিত বোনের বিয়ে দেবেন কীভাবে? আদালের নির্দেশ মাফিক সুদ-সহ বেতনের টাকাই বা ফেরানো হবে কীভাবে? চিন্তায় কার্যত আকাশ ভেঙে পড়েছে চাকরিচ্যুতদের মাথায়। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের চেয়ে মৃত্যুই ভালো বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অবশ্য চাকরিহারাদের একটা বড় অংশ লড়াইয়ের পথে আস্থা রাখছেন। আইনি লড়াই লড়ে চাকরি ফিরে পাবেন বলেই ভরসা রাখছেন।
নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় কলকাতা হাই কোর্টে মামলা চলছিল। গোটা প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। কিন্তু সেখানেও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। কলমের খোঁচায় চাকরিহারা ২৫ হাজার ৭৫২ জনের। চাকরিহারা পশ্চিম মেদিনীপুরের তরিয়া হাই স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু দত্ত বলেন, "বাড়িতে অবিবাহিতা বোন রয়েছে। বয়স্ক বাবা-মা রয়েছে। কীভাবে বোনের বিয়ে দেব জানি না। নিজেরও বিয়ে করা হয়নি।" তবে লড়াই চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সঙ্গে বলেন, "সুপ্রিম কোর্টে যেখানে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করা গেল, কেন তখন সকলের চাকরি গেল, সেটাই তো বুঝতে পারলাম না।" আদালতের রায়ে চাকরি গেলেও নিজের কর্তব্যে এখনও অবিচল তিনি। আজও পড়ুয়াদের পরীক্ষার গার্ডের দায়িত্বে ছিলেন। সেই দায়িত্ব পালন করছেন যত্ন সহকারে।
আরেক চাকরিহারা হালিশহর আদর্শ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল বলছেন, "আদালতের রায় অসহায়তার সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। আর কিছু হারানোর থাকল না। কিন্তু অনেকেই ফোন করে বলছে, বাঁচতে পারব না। মৃত্যু বেছে নিতে হবে। কিন্তু তাঁদের বলব, নিজের ক্ষতি করে কিছু করা যায় না। বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে হবে। তবে বিচারব্যবস্থার উপর থেকে বিশ্বাস চলে গেল। এর শেষ দেখে ছাড়ব।" কিন্তু সবাই এতটা মনের জোর রাখতে পারছেন না। সদ্য চাকরিহারা প্রতাপ রায়চৌধুরী নামে জনৈক শিক্ষক বলছেন, "এরপর মৃত্যুই পথ। আর কিছু রইল না।"
তবে এদিনের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও একাধিক প্রশ্ন রয়ে গেল বলেই দাবি চাকরিহারাদের। তাঁদের প্রশ্ন, ৪ বছরের বেতন ফেরাব কীভাবে? কেউ যদি বেতন ফেরাতে না পারেন তাঁদের কী হবে? প্রমাণিত 'অযোগ্য'দের বিরুদ্ধে কি ফৌজদারী তদন্ত চলবে? প্রশ্ন অনেক। কিন্তু উত্তর কে দেবে?