অর্ণব আইচ: এক মিস্ত্রির কথায় নার্সের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। ওই কাঠের মিস্ত্রির কথায় হৈমন্তীকে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন টলিউডের এক নামী পরিচালক। আবার অন্য একটি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন এক ব্যবসায়ীর হাত ধরে। টালিগঞ্জের মাত্র তিনটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও হৈমন্তী মডেল বা অভিনয়ে থেমে থাকেননি। রীতিমতো নিজের বিনোদন সংস্থা খুলে বসেছিলেন তিনি। সিবিআইয়ের ধারণা, ওই বিনোদন সংস্থার মাধ্যমেই পাচার হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই সংস্থাটির ঠিকানা বেহালার রামমোহন রায় রোডে। সংস্থাটির মালিকানায় হৈমন্তীর নাম না থাকলেও রয়েছে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। ওই আরমান গঙ্গোপাধ্যায় চিটফান্ড কর্তা গোপাল দলপতিরই অন্য একটি নাম। এই সংস্থার মালিক গোপাল দলপতি ছাড়াও বিশ্বনাথ গাইন নামে এক ব্যক্তি। বিশ্বনাথের পরিচয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তৈরি হয় ওই সংস্থাটি। এবার সিবিআইয়ের পক্ষে ওই সংস্থার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, গোয়েন্দাদের মতে, এসএসসি দুর্নীতির বিপুল টাকা ওই বিনোদন সংস্থার মাধ্যমে যেমন পাচার হয়েছে, তেমনই ওই সংস্থাটির মাধ্যমে হৈমন্তী কিছু গানের ভিডিও বা ছবিও তৈরি করার চেষ্টা করেন। আবার সংস্থাটি কোনও সিনেমার প্রযোজনা করেছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, ওই টাকা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা বলেই সন্দেহ সিবিআইয়ের। ওই বিনোদন সংস্থাটির ভূমিকা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্ত শুরু হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘আমি ফেঁসে গিয়েছি’, গ্রামের বাড়িতে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে দাবি গোপাল দলপতির]
এদিকে, গত বছর ওই সংস্থাটি তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই মডেল ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন গোপাল দলপতি তথা আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার রাজা রামমোহন রায় রোডের ফ্ল্যাটের কাছেই একটি ডাস্টবিনের ভিতর থেকে পাওয়া গিয়েছে ‘অচেনা উত্তম’ নামে একটি সিনেমার স্ক্রিপ্ট। টলিউড সূত্রে জানা গয়েছে, ওই সিনেমার পরিচালককে হৈমন্তীর সন্ধান দিয়েছিলেন সিরাজ নামে এক কাঠের মিস্ত্রি। পরিচালক ছবিতে নার্সের চরিত্রর সন্ধান করছিলেন। সিরাজের কথায় তিনি হৈমন্তীকে সেই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দেন। সূত্রের খবর, একদিন কাজ করার পরই তিনি প্রযোজকের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও ছোট চরিত্রের শুটিং একদিনেই হয়ে গিয়েছিল। পরিচালক ছবির ডাবিংও অন্য এক অভিনেত্রীকে দিয়ে করান। অবশ্য টাকা পেয়ে গিয়েছিলেন।
টলিউড জানয়েছে, হৈমন্তী ‘জাল’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমাটি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত। ওই ছবিতে বিনিয়োগ করেছিলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি হাওড়ার ব্যবসায়ী। লোহালক্কড়ের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। দু’জনই হাওড়ার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে একে অন্যের পরিচিত। সেই সূত্র ধরে ওই ছবির পরিচালকের কাছে হৈমন্তীকে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী। পরিচালক ওই ব্যবসায়ীর অনুরোধে তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। ‘আনটোল্ড লাভ’ নামে আরও একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন হৈমন্তী। সিনেমার সূত্র ধরে হৈমন্তীর সঙ্গে কতজনের যোগাযোগ ছিল, তা জানার চেষ্টা করছে সিবিআই।