বাবুল হক, মালদহ: মিড ডে মিলের জন্য রান্না হয়েছিল মুরগির মাংস (Chicken)। কিন্তু পড়ুয়াদের পাতে পড়ল স্রেফ ঝোল। এমন কাণ্ড ঘিরে হইহই ব্যাপার মালদহের (Maldah) ইংলিশবাজার ব্লকের অমৃতি কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কারণ হিসেবে জানা যায়, মাংসের টুকরোগুলি খেয়ে ফেলেছেন শিক্ষকরা। আর তাই পড়ুয়াদের পাতে জুটেছে ঝোল। এমন নজিরবিহীন ঘটনার প্রতিবাদে এদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালাবন্দি রেখে দিনভর বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা। শেষে জনরোষের কবল থেকে শিক্ষকদের উদ্ধার করে পুলিশ। এ বিষয়ে জেলাশাসক জানিয়েছেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পড়ুয়াদের জন্য মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) নয়া মেনু চালু হতেই এমনই ন্যক্কারজনক অভিযোগ ঘিরে বুধবার ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল মালদহের ইংলিশবাজার ব্লকের অমৃতি কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২৫০। অন্যান্য স্কুলের মতোই অমৃতি গ্রামের ওই স্কুলেও মিড ডে মিলের মেনুতে যোগ হয়েছে মুরগির মাংস ও ফল। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ২৫০ জন পড়ুয়া থাকলেও ৩০০ জন পড়ুয়ার জন্য মুরগির মাংস কিনে আনা হয়। কিন্তু তারপর শিক্ষকদের একাংশ রাঁধুনি জানান, মুরগির মাংসের লেগ পিসগুলি আলাদাভাবে কষে রান্না করবেন রাঁধুনিরা। সেইসঙ্গে অন্তত দশজনের জন্য সরু চালের ভাত (Rice) আলাদাভাবে রান্না করতে হবে। শিক্ষকরা তা খাবেন। রাঁধুনিরা সেটাই করেছিলেন। পড়ুয়াদের জন্য মিড ডে মিলের সরকারি চালের ভাত ও চিকেনের লেগপিস ছাড়া বাকি অংশের মাংস আলাদা করে রান্না করা হয়। অভিযোগ, জমিয়ে কষা লেগপিস খান শিক্ষকরা। আর রান্নাঘর থেকেই ফাঁস হয়ে যায় এই ন্যক্কারজনক ঘটনা।
আলাদাভাবে বেছে রাখা লেগ পিসগুলির ছবি পৌঁছে যায় অভিভাবকদের মোবাইলে (Mobile)। আর এতেই বিষয়টি জনসমক্ষে চলে আসে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত অভিভাবকরা স্কুলে ছুটে গিয়ে বিক্ষোভ (Agitation) দেখান। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অফিস ঘরে তালাবন্দি করে রাখেন। সকাল ১১টা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত এভাবেই বন্দি দশায় কাটাতে হয়েছে শিক্ষকদের। শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে ছাড়া পান তাঁরা।
[আরও পড়ুন: টানাপোড়েন শেষ, রাজ্যপালের সচিব পদ থেকে নন্দিনী চক্রবর্তীকে অব্যাহতি দিল নবান্ন]
শিক্ষকদের (Teachers) জন্য লেগপিস দিয়ে আলাদাভাবে রান্নার বিষয়টি অভিভাবকদের সামনে স্বীকার করে নেন মিড ডে মিলের রাঁধুনিরা। পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ ‘চিকেন’ শিক্ষকরা খেয়েছেন শুনেই অবাক জেলাশাসকও (DM)। তড়িঘড়ি করে জেলা সদর থেকে মিড ডে মিলের তদারকির দায়িত্বে থাকা আধিকারিক দল এবং সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শককে ওই স্কুলে পাঠানো হয়। পৌঁছয় ইংলিশবাজার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। তালাবন্দি শিক্ষকদের কোনওরকমে জনরোষের কবল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: রাজ্য বাজেট ২০২৩: ক’টি নতুন প্রকল্প, কোন খাতে কত বরাদ্দ? দেখে নিন একঝলকে]
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নিখিল সিংহ বলেন, “গ্রামের বাসিন্দারা আমার কাছে অভিযোগ করেন, চিকেনের লেগ পিস এবং ভালো মাংস শিক্ষকরা নিজেদের জন্য রেখে দিচ্ছেন। বাকি ছাঁট মাংস পড়ুয়াদের দিচ্ছে। এই নিয়ে সবাই স্কুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আমি এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে স্কুলের এসআইকে ফোন করি। উনি ফোন ধরেননি।” মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, “অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে সরেজমিনে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”