shono
Advertisement
Royal Bengal Tiger

ফের কৌশল বদল, জিনাতের পুরুষসঙ্গীকে খাঁচাবন্দি করতে নয়া পরিকল্পনা বনদপ্তরের

এই বাঘটির গলায় রেডিও কলার না থাকায় সমস্যায় বনকর্মীরা।
Published By: Sayani SenPosted: 11:39 PM Jan 15, 2025Updated: 11:39 PM Jan 15, 2025

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জিনাতের মতোই তার পুরুষসঙ্গীও টোপ গিলল না। ফলে বাঘবন্দি অভিযানের প্রথম দিন ব্যর্থই হল। রাতভর সবুজ খাঁচাতেই পড়ে থাকল তিন-তিনটি ছাগল। ফলে বুধবার বেলার দিকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে দেওয়া ওই টোপগুলির মধ্যে একটি তুলে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এদিন দ্বিতীয় দিনের অভিযানে অন্য এলাকায় শূকরের মাংসের লোভ দেখিয়ে ওই দক্ষিণরায়কে খাঁচাবন্দি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এদিকে, এদিন ড্রোন উড়িয়েও নজরদারি চালানো হয়। পৃথক এলাকায় নতুন করে বসানো হয় ২০টি ট্র্যাপ ক্যামেরা।

Advertisement

পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ছুঁয়ে থাকা মানবাজার দুই বনাঞ্চলের বড়গোড়া জঙ্গল এলাকায় বুধবার সন্ধ্যার পর খাঁচা পেতে শূকরের মাংস দেওয়া হয়। স্থানীয় হাট থেকে সেই মাংস কিনে তা রাখা হয়। ছাগল টোপ ব্যর্থ হওয়াতেই শূকরের মাংসের লোভ দিয়ে তাকে খাঁচা বন্দি করতে চাইছে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের দল। রাজ্যের মুখ্য বনপাল দক্ষিণ পশ্চিম চক্র বিদ্যুৎ সরকার বলেন, " আগের কোন টোপ কাজে লাগেনি। তাই একটি এলাকা থেকে সেই টোপ তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে পৃথক এলাকায় শূকরের মাংস দেওয়া হয়েছে।" এদিন দিনভর মানবাজার দুই ও বান্দোয়ানের তিনটি বনাঞ্চল বান্দোয়ান এক, বান্দোয়ান দুই ও যমুনা বনাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ খোঁজা হয়। জিনাতের প্রেমিক তথা ওই রয়্যাল বেঙ্গলের সঠিক অবস্থান বুঝতেই এদিন সকাল থেকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে বনদপ্তর।

শূকরের মাংস দিয়ে খাঁচা পাতা হচ্ছে। ছবি: অমিতলাল সিং দেও

একপক্ষ কাল পার হয়ে যাবার পরেও জিনাতের পুরুষসঙ্গীকে বাগে আনতে পারল না ঝাড়খণ্ড ও বাংলা। তবে গত রবিবার থেকে বাংলায় তার স্থায়িত্ব চার দিন। জিনাত অবশ্য বান্দোয়ানে ছিল পাঁচ দিন। মানবাজার দুই রেঞ্জ-এ একদিন। দক্ষিণ বাঁকুড়ায় দু'দিন থাকার পর ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয়। আসলে এই বাঘ-বন্দি অভিযানে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা যেমন নতুন-নতুন কৌশল নিচ্ছেন তেমনই জিনাতের সময় কি হয়েছিল সেই 'পাস্ট হিস্ট্রি' মনে করে অভিযানের রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। ওই সুন্দরবনের টিমের প্রধান,
সজনেখালির বিট অফিসার তথা জিনাতকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, " এই ধরনের কঠিন অভিযানে শুধু খাঁচা পেতে টোপ দেওয়া হলো। জাল দিয়ে ঘেরা হলো তাতেই সাফল্য আসে না। মনস্তত্ত্ব বুঝতে হয়। সেই হিসাবে অভিযানের রূপরেখা তৈরি করা হয়। আমরা সেই কাজ করারই চেষ্টা করছি।"

নতুন করে বান্দোয়ানে বসানো হল ট্র্যাপ ক্যামেরা। ছবি: অমিতলাল সিং দেও

আসলে সমস্যা হল এই বাঘের গলায় রেডিও কলার না থাকা। আর তার চেয়েও বাস্তব হল এই শার্দুল কোথা থেকে এসেছে সেটাই বুঝে উঠতে পারেনি ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ-সহ অরণ্যভবন। ঝাড়খণ্ডের বনকর্তাদের সঙ্গে বাংলার বনদপ্তরের আধিকারিকদের নিয়মিত সমন্বয়ে তথ্য আদান-প্রদান হলেও এই দক্ষিণরায়ের আগমন কোথায় তা পরিষ্কার নয়। সেই কারণেই বাঘের 'পাস্ট হিস্ট্রি' বুঝতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিক থেকে রাজ্যের বনকর্তাদের। ঝাড়খণ্ডে এই রয়্যাল থাকাকালীন পালামৌ টাইগার রিজার্ভের আধিকারিকরা সেখানে বসে থাকলেও তারাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি যে এই বাঘ তাদের এলাকা থেকে এসেছে। ফলে ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি অরণ্যভবনও অন্যান্য টাইগার রিজার্ভ-র সঙ্গে যোগাযোগ করে বোঝার চেষ্টা করছে ওই রয়্যালটি কোথা থেকে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করে। পালামৌর পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে ঝাড়খণ্ডের বেতলা, হাজারিবাগ, ওড়িশার সিমলিপাল, এমন কি ছত্তিশগড়ও।

তবে এই বাঘের আগমনের অনুসন্ধান পর্বের মধ্যেই বাংলার বনকর্তাদের অনুমান, ওই রয়্যাল বেঙ্গল সিমলিপাল থেকেও আসতে পারে। সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে ওই দক্ষিণরায় সিমলিপালের মেলানিস্টিক নয় তো? সরকারিভাবে সাইটিং না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না ওই বাঘের রঙ হলুদ ডোরাকাটা? নাকি কালো ডোরাকাটা? অরণ্য ভবনের আলোচনায় উঠে আসছে, মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে যে কারণে জিনাতকে সিমলিপালে নিয়ে আসা হয়েছিল অর্থাৎ এখানকার পুরুষ বাঘেদের সঙ্গে গোপন মেলামেশায় ব্যাঘ্র প্রকল্পে রয়্যালের আসল রঙ হলুদ ডোরাকাটা ফিরে আসে। তাহলে কি সিমলিপালে জিনাতের সঙ্গে তার এই পুরুষসঙ্গী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মেলামেশা বা পরিচিতি হয়েছিল? যার টানেই জিনাতের ফেলে যাওয়া পথে তার পুরুষসঙ্গী ঝাড়খন্ড হয়ে বাংলায় ঢোকে। তারপর বাংলাতে এসে তার পথেই পদচারণা! এই প্রশ্নগুলিকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজ্যের বনকর্তারা। সবকিছু বিষয় চিন্তাভাবনার মধ্যে রেখে তা যাচাই করে দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু করে জিনাতকে শুট করা ওই সুন্দরবনের টিম।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ছাগলের টোপ ব্যর্থ। শূকরের মাংসের লোভ দেখিয়ে দক্ষিণরায়কে খাঁচাবন্দি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
  • ফের কৌশল বদল, জিনাতের পুরুষসঙ্গীকে খাঁচাবন্দি করতে নয়া পরিকল্পনা বনদপ্তরের
  • এই বাঘটির গলায় রেডিও কলার না থাকায় সমস্যায় বনকর্মীরা।
Advertisement