রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: চারদিকে শুধুই জল। কূল-কিনারা নেই। এদিকে দ্রুত মাথার উপর নেমে আসছে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কমছে দৃশ্যমানতা। মাঝ সুমদ্রে কাগজের নৌকার মতো দুলছে ট্রলার। ভিতরে অসহায় ২৩ পর্যটক। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। প্রাণ বাঁচাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। বলা ভালো পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য চালু করা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরই নতুন জীবন দিল তাঁদের। শনিবার রাতে মাঝসমুদ্রে কয়েক ঘণ্টা চরম উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর অবশেষে দিঘা উপকূল থানার পুলিশের তৎপরতায় রক্ষা পেলেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা থেকে একটি ট্রলার ভাড়া করে দিঘার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন পর্যটকের দল। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনোর প্রায় আধঘণ্টা আগে ছন্দপতন! মাঝসমুদ্রে আচমকাই বিকল হয়ে যায় ট্রলারের ইঞ্জিন। আনন্দের মুহূর্তে বদলে যায় মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে। একদিকে উত্তাল সমুদ্রের গর্জন! অন্যদিকে দ্রুত নেমে আসা নিছিদ্র অন্ধাকারে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ২৩ জন পর্যটক। শুরু হয় কান্নাকাটি!
দুয়ারে বিপদ বুঝে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেননি ট্রলারের কর্মীরা। তাঁরা পুলিশের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বিষয়টি জানায়। খবর পাওয়ামাত্রই সক্রিয় হয়ে ওঠে দিঘা মোহনা থানার পুলিশ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পুলিশের একটি উদ্ধারকারী দল দ্রুতগতির স্পীড বোড নিয়ে মাঝসমুদ্রে পাড়ি দেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে, ঘন অন্ধকারে ট্রলারের মধ্যে কার্যত মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন পর্যটকেরা! বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় একে একে ২৩ জন পর্যটককেই উদ্ধার করা হয়। রাতেই তাঁদের নিরাপদে দিঘায় আনা সম্ভব হয়েছে। এক পর্যটকের কথায়, "আনন্দের দিঘাযাত্রা যে এভাবে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করাবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছিল, কোনও উপায় ছিল না। পুলিশ সময়মতো না পৌঁছলে আজ কী হতো জানি না।"
পূর্ব মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিতুন কুমার দে বলেন, "সম্প্রতি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হেল্পলাইন নম্বর (৭০৪৭৯৮৯৮০০) চালু করা হয়েছে। বিপদে পড়া ওই ট্রলারের যাত্রীরা সামাজিকমাধ্যম থেকে সেই নম্বর সংগ্রহ করেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এর ফলেই আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা জেলা পুলিশের সাফল্য।" আপৎকালীন পরিস্থিতিতে পুলিশের এই তৎপরতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন পর্যটকেরা। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ট্রলারটি বিকল হয়েছিল। বর্তমানে পর্যটকেরা সকলেই সুস্থ আছেন।
