শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। তাই ছেলেকে নিজে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে যাচ্ছিলেন বাবা। কিন্তু অঘটন ঘটে গেল সেখানেই। ধেয়ে এল অতিকায় দলছুট হাতি (Elephant)। ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগটুকুও মিলল না। শুঁড়ে নিয়ে পেঁচিয়ে টান মেরে ছিনিয়ে নিল। এরপর চোখের সামনে পিষে মারল ছেলেকে। মাধ্যমিকের (Madhyamik) প্রথম দিন এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইল জলপাইগুড়ি।
দৃশ্যটা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর বিষ্ণু দাসের। জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) রাজগঞ্জের (Rajgunj) টাকিমারি চর এলাকার কৃষক বিষ্ণু দাস। দুই ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, এই নিয়ে আনন্দের সীমা ছিল না পরিবারের। সকাল সকাল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে অর্জুন দাসের মঙ্গল কামনায় পুজো দিয়েছিলেন মা সুমিত্রা দাস। অনেকটা পথ যেতে হবে তাই নিজের বাইকে ছেলেকে নিয়ে রওনা দিয়ে ছিলেন বাবা। বেলাকোবার কেবল পাড়া হাইস্কুলে মাধ্যমিকের সিট পড়েছে ছেলের। বাড়ি থেকে বেলাকোবা পৌঁছনোর জন্য জঙ্গল (Jungle) পথ ধরেছিলেন। কিন্তু এভাবে দিনের আলোয় রাস্তা আটকাবে হাতি ভাবতে পারেননি।
[আরও পড়ুন: ‘নাগরিকদের কথা ভাবতে হবে পাকিস্তানকে’, দেউলিয়া প্রতিবেশী দেশকে পরামর্শ জয়শংকরের]
হাতির সঙ্গে মোলাকাত এই প্রথম নয় বিষ্ণু দাসের। জানান, বৈকন্ঠপুরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে প্রায় প্রতিদিনই হাতি বেরিয়ে গ্রামে ঢোকে। কিছুদিন আগেই গ্রামের একজনকে পিষে মেরেছে হাতি। গত বর্ষায় বাড়িতে হাতি ঢুকে পড়ে। ঘর ভাঙে। গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে খায়। কোনও মতে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন বিষ্ণুবাবু। জানান, এদিনও পালানোর চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। ছেলের হাত ধরে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হাত থেকে ছেলেকে ছিনিয়ে নেয় হাতি। মুহূর্তে মধ্যে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে ফেলে পা দিয়ে পিষে মারে হাতি। নিজে বাঁচলেও ছেলেকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ এখন কাঁটা হয়ে বিঁধছে মনে। জানান, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে এলাকার মায়েদের কোল খালি হতে আর বেশি সময় লাগবে না। বনদপ্তর (Forest Department) যাতে বনের হাতিকে বনেই আটকে রাখার ব্যবস্থা করে সেই দাবি জানান তিনি।