সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলায় সবুজ ঝড়। পর্যদুস্ত বিজেপি। তবে তা সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুরে তেমন ভালো ফল হয়নি শাসক শিবিরের। কাঁথি, তমলুক দুটি আসনই পদ্মশিবিরের দখলে। তমলুকে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে বিপুল ভোটে হেরেছেন তৃণমূলের দেবাংশু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই ফলাফলকে মানতে নারাজ। ষড়যন্ত্রের ফলে এমন খারাপ ফলাফল বলেই দাবি তাঁর। শনিবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকেও সে কথা বলেছেন দলনেত্রী। আবার সূত্রের খবর, দেবাংশু নাকি প্রচারে নিজের ১০০ শতাংশ উজাড় করে দেননি বলেও কালীঘাটের বৈঠকে আলোচনা হয়। আর ঠিক তার পরদিনই ফেসবুকে অভিমানী পোস্ট দেবাংশুর।
গত দেড় মাস যাবৎ কীভাবে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন, তার উল্লেখ রয়েছে ওই পোস্টে। ভোটের আগে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য নিজের '১০১ শতাংশ' উজাড় করে দিয়েছেন বলেই দাবি। দেবাংশু লেখেন, "সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে টয়লেট সেরে, স্নান করে, এক বাটি ছাতুর সরবত খেয়ে রোজ বেরিয়ে পড়তাম সকাল ৮-টার মধ্যে। প্রবল রৌদ্রে দুপুর ১ টা পর্যন্ত প্রচার চলত। তারপর ঠিকানায় ফিরে একটু গা ধুয়ে, দুপুরের খাওয়া সেরে পুনরায় ৩ টে নাগাদ রওনা দিতাম। চলত রাত্রি ৯-টা পর্যন্ত.. কখনও কখনও সেটা সাড়ে দশটাও বাজত। রাতে নিমতৌড়ির বাড়িতে ফিরে খাবার খেয়ে শুরু হত বিভিন্ন নেতা, কর্মীদের সাথে বাড়ির অফিসে অভ্যন্তরীণ মিটিং, কখনও কখনও সেসব মিটিং চলেছে রাত্রি ২-টো পর্যন্তও..। মিটিং শেষে ঘুমিয়ে আবার পরের দিন সকালে ৬ টায় ওঠা..। তমলুকের দলীয় কর্মীরা, যারা সেই বাড়িতে প্রায়শই আসতেন তারা সকলেই এই রুটিন জানেন। পরিশ্রমে নিজের ১০১% দিয়েছি। যা করতে পারি তার বেশি করেছি।"
[আরও পড়ুন: বিদায় নাড্ডার! বিজেপির নতুন সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে কারা?]
দেবাংশুর অভিযোগ, নন্দীগ্রাম ও ময়নায় লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়েছে বিজেপি। এলাকায় টাকার বিনিময়ে গেরুয়া শিবির ভোট করিয়েছে বলেও দাবি তাঁর। দেবাংশু সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, "নিজেদের সবটা দেওয়ার পরেও অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি। এত কোটি কোটি টাকার বিরুদ্ধে আমাদের স্বল্প ক্ষমতার লড়াই ব্যর্থ হয়েছে। গোটা জেলায় নেতা-কর্মী নয়, ভোট করিয়েছে কেবল টাকা। সাথে সাথে ছিল নন্দীগ্রাম ও ময়নার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত সন্ত্রাস; নির্বাচনের দিন তিনেক আগে থেকে বিরুলিয়া, বয়াল, ভেকুটিয়া, হরিপুর, গোকুলনগরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দিতে না বেরোনোর হুমকি তথা ফতোয়া এবং সোনাচূড়া অঞ্চল জুড়ে ভোটের দিন দেদার ছাপ্পা। ময়নার বাকচা অঞ্চল এতটাই মুক্তাঞ্চল, তৃণমূল নাম উচ্চারিত হলেও মারধর এমনকি প্রাণহানিও সেখানে নতুন নয়। দলের ঝান্ডা বাঁধার লোক অন্ধি সেখানে নেই। তার উপর নির্বাচনের দিন দুয়েক আগেই সেই খুন; যাকে কেন্দ্রে করে গোটা নন্দীগ্রাম হয়ে উঠেছিল দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। সেই পরিস্থিতে সবটা এতটা একপেশে হয়ে গিয়েছিল, এক সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল এই নির্বাচন এখন লড়া, না লড়া সমান ব্যাপার। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি!"
সোশাল মিডিয়া পোস্টের একেবারে শেষে কার্যত আক্ষেপের সুরে দেবাংশু আরও লেখেন, "মার্চে ওজন ছিল ৮৩ কিলো। যা আজ কমে ৭৭.. সৌজন্যে শেষ আড়াই মাস। এই ৬ কিলো ওজনের বিনিময়ে ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, আশীর্বাদ পেয়েছি। সেটাই আমার কাছে এই নির্বাচনের নির্যাস.. আগামী দিনে এই রাজনৈতিক নদী পথ আমায় কোন মোহনায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে জানিনা.. শুধু এটুকু জানি, আমার নৌকো খোয়া গেছে, কেবল নিজেকে ভাসিয়ে, বাঁচিয়ে রেখেছি এই অগাধ জলরাশির পৃষ্ঠ দেশে..।" বয়সের নিরিখে কনিষ্ঠতম প্রার্থী ছিলেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। এত অল্প বয়সে লোকসভা ভোটে লড়ার টিকিট দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানান দেবাংশু।