সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘আবোওয়া: দিশম আবোওয়া: রাজ’। অর্থাৎ ‘আমার গ্রাম আমার রাজ’। এই স্লোগান তুলে বনাধিকার আইন মানার জন্য পুরুলিয়ার (Purulia) অযোধ্যা পাহাড়ে ১৯ টি গ্রামসভায় সাইনবোর্ড বসাল প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ। ‘ভগবান’ বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে অযোধ্যা পাহাড়ের (Ayodhya Hill) প্রতিটি গ্রামসভায় এই সাইনবোর্ড স্থাপন কর্মসূচি হাতে নেয় ওই সংগঠন। এই কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যবস্থাপনায় ছিল।
অযোধ্যা পাহাড়ে থাকা বাঘমুন্ডি (Bagmundi) ব্লকের ১৮ টি গ্রাম সভা ও আড়শা ব্লকের একটি মিলিয়ে মোট ১৯ টি গ্রাম সভাতেই এই সাইনবোর্ড বসানো হয়। সাইনবোর্ডে ইংরাজি ও বাংলা ভাষায় লেখা, ২০০৬ সালের বনাধিকার আইন (Forest Act) অনুযায়ী, গ্রামসভার কোনওরকম অনুমতি ছাড়া ‘কমিউনিটি ফরেস্ট’ এলাকায় কোনও কাজ করা যাবে না। তবে পুরুলিয়া বনবিভাগ আগেই জানিয়েছিল, গ্রামসভা প্রশাসনের স্বীকৃত নয়। প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের সভাপতি নকুল বাস্কে বলেন, “বনাধিকার আইন অনুযায়ী গ্রাম সভার অনুমতি ছাড়া ‘কমিউনিটি ফরেস্ট’ এলাকায় কোন কাজ করা যাবে না। অযোধ্যা পাহাড়ে থাকা ১৯ টি গ্রাম সভায় আমরা সাইনবোর্ড (Sign Board) টাঙিয়ে তা জানিয়ে দিয়েছি। “
[আরও পড়ুন: বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আম্বানি-হিরানন্দানি! থাকবেন আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা?]
এই সংগঠনের গ্রাম সভার বিষয়টি সামনে এসেছে অযোধ্যা পাহাড়ের সাইট সিয়িং বামনি ফলস ঘিরে। ওই সংগঠনের দাবি ছিল, বামনি ফলসের অধিকার অযোধ্যা পাহাড়ের মানুষজনের হাতে তুলে দিতে হবে। এই নিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে পুলিশ-জনতা ঝামেলা বাঁধে। আসলে অযোধ্যা পাহাড়ে টুরগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের (Hydro Power Plant) কাজে পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই এই সংগঠন ওই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছে। ওই বিষয়টিকে সামনে রেখেই অযোধ্যা পাহাড়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আন্দোলন চলছে।
সম্প্রতি এই আন্দোলনের ধার আরও বাড়ে। যদিও পুলিশি পদক্ষেপে অযোধ্যা পাহাড়ে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আর ওই টুরগা প্রকল্পের বাতিল, বামনি ফলসের অধিকারকে সামনে রেখেই এই গ্রামসভার বিষয়টি আসে। কয়েক মাস আগে অযোধ্যা পাহাড়ে ডিএফও-সহ (DFO) একাধিক রেঞ্জ আধিকারিককে ঘেরাও করে এলাকার মানুষজন জানিয়েছিলেন, গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া জঙ্গলঘেরা গ্রামে ঢুকতে পারবেন না ডিএফও। এই ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাও হয় বাঘমুন্ডি থানায়।
[আরও পড়ুন: নজরে চিনের সাবমেরিন বাহিনী, ভারতের হাতে ডুবোজাহাজ-ধ্বংসী অত্যাধুনিক যান]
তবে এইভাবে অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামসভায় ওই সংগঠন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি যে অন্যরকম হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত পেয়ে গিয়েছে প্রশাসন। প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের কর্মসূচিতে অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামসভাগুলিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। নিজেদের দাবিদাওয়া সম্বলিত ব্যানার ও স্লোগান দিয়ে ওই সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।