নন্দন দত্ত, সিউড়ি: একই ভোটার নম্বর। অথচ তা নথিভুক্ত দুই রাজ্যে, দুই ব্যক্তির নামে। নির্বাচন কমিশনের সাইটেই এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। মুর্শিদাবাদে ধৃত জঙ্গি সাব শেখের থেকে দুটি ভোটার কার্ড উদ্ধার হয়েছে। প্রশ্ন, তাহলে কি একই জালিয়াতি করে আরও জঙ্গি রাজ্য়ে ঘুরছে? তাই ভোটার কার্ড ও তালিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনকে শুক্রবার চিঠি দিল পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য় মঞ্চ। এই মঞ্চের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ রিপন চিঠি দিয়ে দাবি করেন, তাঁদের কাছে একাধিক ভোটার কার্ডের নমুনা আছে। যা একই নম্বরে দেশের অন্য রাজ্যে অন্য নামের ব্যক্তির নামে নথিভুক্ত।
এই দাবির পরই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, LPZ2746576 নম্বরের একটি ভোটার কার্ড দেশের দুই প্রান্তের দুই বাসিন্দার নামে নথিভুক্ত। এই নম্বরের একটি ভোটার কার্ড রয়েছে বাংলার বাসিন্দা সাহিন আলমের নামে। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরে। সেই একই নম্বরে আরও একটি ভোটার কার্ড রয়েছে আয়ুব খানের। তিনি গুজরাটের আহমেদাবাদের বাসিন্দা। শুধু একটি নয়, এমন আরও একটি ভোটার কার্ডের হদিশ মিলেছে। ভোটার কার্ড নম্বর LPZ2746790-তেও গন্ডগোল। একজন গুজরাটের জিগনেশ মাকভানা। অন্যজন দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর এলাকার তসলিমা মিঞা। একই ভোটার কার্ড নম্বরে এমনই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আশঙ্কা, যদি গুজরাটের এমনই কোনও একই নম্বরের এপিকধারী ব্যক্তির অপরাধের জেরে মামলা চলে, সেক্ষেত্রে বাংলার একই নম্বরের এপিকধারীকে জড়িয়ে দেওয়া হতে পারে।
এদিকে, মুর্শিদাবাদের ধৃত সাব শেখরের থেকেও দুটি কার্ড উদ্ধার হয়েছে। একটি হরিহর পাড়ার। অন্যটি নওদার ঠিকানায়। আদতে রাজশাহির বাসিন্দা সাব আনসারুল্লা বাংলা দলের সদস্য। ফলে সংশয় দেখা দিয়েছে ভোটার তালিকা ও তাতে নাম তোলার প্রক্রিয়া ঘিরেও। বিশেষ করে যেখানে এই তালিকা আপডেট করে চূড়ান্ত হয়েছে চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ।
পরিযায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই তালিকা সংশোধন না হলে কি আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোট গুজরাটের ব্যক্তিরা বাংলায় এসে দিয়ে যাবে? এমন ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ। পাশাপাশি চিঠি দেওয়া হয়েছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনকেও। সেই চিঠিতে তারা জানান, যেসব পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন, তাঁদের ভুয়ো এপিকের সন্দেহে বাংলাদেশি বলে হেনস্তা করা হচ্ছে। কারও কারও কপালে জুটছে নির্যাতন। পাশাপাশি, বুথ ভিত্তিক স্থানীয় সরকারি অফিসাররা সব তথ্য যাচাই করে তালিকা পাঠানোর পরেও কি করে এই মারাত্মর ভুল থেকে যাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। এছাড়াও অনেকে জানেই না তাঁদের একই এপিক নম্বরে দেশের অন্য প্রান্তে কারও একজনের এপিক থেকে গিয়েছে তাঁদের কী করণীয়।
সরকারি পর্যায়ে কারও মতে দুজনই সাব শেখের মতো কার্ড নকল করেছেন। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে কাজ করা সংগঠন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ রিপন বলেন, "পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছি। বাংলাদেশি ইস্যুতে রাজ্যের শ্রমিকরা বাইরে কাজ করতে গিয়ে এমন সমস্যায় পড়েছে। তাঁদের নির্যাতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী বিধানসভা ভোটে কোনও রাজনৈতিক দল আগে থেকেই পরিকল্পিত চক্রান্ত করছে কিনা তা দেখা দরকার।"