রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: প্রকৃত অর্থেই দশভুজা। সংসারের হাজারও কাজ সামলে দুর্গা প্রতিমা গড়েন তেহট্টের (Tehatta) গৃহবধূ ছায়া পাল। দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী কিংবা কালী – সকলের মূর্তি এখন একা হাতে তৈরি করেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেতাই সাধুবাজার গ্রামের গৃহবধূ। একসময়ে শ্বশুর, ভাসুরদের এভাবে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়তে দেখেছিলেন। তখনও তিনি এই কাজের কিছুই জানতেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখেই সব শিখে নিয়েছেন। খড় বাঁধা, মাটির প্রলেপ দেওয়া, চক্ষুদান – একে একে সব কাজ এখন একাই করেন ছায়া দেবী। এবছর অবশ্য মূর্তি গড়ে তেমন লাভ নেই বলেই মনে করছেন তিনি।
ছায়া দেবীর কোথায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর খরচ অনেকটাই বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বে অনেক বারোয়ারি পুজোর বরাত পেতে তুলনায় কম টাকায় বায়না নিয়ে সংসারের কাজ সামলেই দুর্গা (Village Durga Puja) প্রতিমা গড়তে হচ্ছে ছায়াদেবীকে। গত কয়েক বছর আগেও তিনি ১৪ টি দুর্গা প্রতিমা গড়ার বরাত পেতেন। অনেক নতুন নতুন শিল্পী প্রতিমা গড়ার কারণে এ বছর কয়েকটি প্রতিমার বরাত কম পেয়েছেন বলে জানান প্রতিমা শিল্পী ছায়া পাল। এ বছর তিনি দশটি প্রতিমা তৈরীর বরাত পেয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। সংসার সামলে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিমা গুলি উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিতে খুব চাপ হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেশী বিবেকানন্দ ভৌমিক, শ্রীকান্ত ঘোষ, দিবাকর পালরা জানান, প্রতিমা শিল্পীর পরিবার সূত্রে জেনেছি প্রতিমা শিল্পী ছায়াদেবী বিয়ের আগে মূর্তি গড়ার কাজ সম্বন্ধে কিছুই জানা ছিল না। ভাসুর, শ্বশুরদের হাতের কাজ দেখে তিনি নিজেই এখন একজন প্রতিষ্ঠিত প্রতিমা শিল্পী। এখন তার হাতে গড়া বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা এলাকার বিভিন্ন মন্দিরের জায়গা করে নিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘কোনও মন্ত্রীরও আসা উচিত ছিল’, বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে গিয়ে ‘পর্যটক’ খোঁচার জবাব রাজ্যপালের]
শিল্পী ছায়া পাল বলেন, ”আজ থেকে ৩৮ বছর আগে মাত্র তেরো বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি এই সাধুবাজার গ্রামে আসি। বাবার বাড়ি বার্নপুর হালসানা পাড়ায়। বাবা চাষের কাজ করে সংসার চালাতেন। যখন বিয়ে হয় তখন ছিল আমাদের শ্বশুরবাড়ির যৌথ পরিবার, এখন সকলের পৃথক। সেই সময় সংসারের কাজ সামলে অবসরে শ্বশুর, ভাসুরদের মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ বসে বসে একদৃষ্টে দেখতাম ও তাদের কাজের অনেক সময় সহযোগিতা করতাম। সেই থেকে কাজের হাতে খড়ি।” ছায়াা দেবী আরো জানান, এখন তিনি পুরোদমে দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, কালী সমস্ত প্রতিমা তৈরি করতে পারদর্শী। বাঁশ ও কাঠের কাঠামো বাদে খড় বাঁধা মাটির প্রলেপ দেওয়া অবশেষে মূর্তির চক্ষুদান সমস্ত কাজই তিনি নিজে হাতে করেন।
[আরও পড়ুন: ‘১০০ দিনের কাজের টাকা মেটান’, ত্রাণশিবিরে রাজ্যপালকে ঘিরে দাবি উত্তরবঙ্গের বিপর্যস্তদের]
এবার তিনি ১০ টি দুর্গা প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। যার প্রতিটির মূল্য ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে। সারা বছরই কোনও না কোনও মূর্তির কাজ করতেই হয়। প্রতিমা গড়েই সংসার চলে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে লাভের অঙ্ক তলানিতে ঠেকেছে। পরিবেশ দূষণের কথা ভেবে ভেষজ রঙে মূর্তি গড়ার কাজ করেন। বাড়িতে বসে সমস্ত মূর্তি গড়ার কাজ করলেও নিজ নিজ বরাত অনুযায়ী স্বামী ও সন্তান অন্যত্র মণ্ডপে গিয়ে কাজ করেন। ছেলে গোলক পাল বলেন, ”বাড়িতে তৈরি মূর্তিগুলো মা নিজে হাতে তৈরি করেন। অবসর সময়ে কখনও কখনও আমরা মাকে নামমাত্র সহযোগিতা করতে হয়।”