গৌতম ব্রহ্ম: ভাত ফুটতে শুরু করলে গন্ধে আলো হয়ে যায় রান্নাঘর! দূর থেকে মালুম হয় সুবাস! নামেও হরেক বৈচিত্র। বাদশাভোগ, গোপালভোগ, সীতাভোগ, তুলসীভোগ, রাঁধুনিপাগল, জামাইনাড়ু, মোতিবাস, লাল বাদশাভোগ, বাদশাপসন্দ, গন্ধেশ্বরী, কাটারিভোগ, চিনিসক্কর, রাধাতিলক। কোনওটার চাষ হচ্ছে। কোনওটা লুপ্তপ্রায়। কোনওটা বিলুপ্ত।
এবার এইসব সুগন্ধী ধান ও বীজের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিল নবান্ন। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত এক দশকে এ রাজ্যে সুগন্ধী চালের উৎপাদন বড়েছে চারগুণ, চাষের এলাকা বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ, বীজের উৎপাদন পাঁচগুণ। আগামিদিনে আরও জোর দেওয়া হবে এই সব দেশী ধানের বীজ উৎপাদনে। যাতে বাঙালির পাতে ফের সুগন্ধী ভাত দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে ধানচাষিদের আয়। এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
এক সময় বাংলায় পঞ্চাশের বেশি জাতের সুগন্ধী ধান চাষ হত। এখন মাত্র ২৬টি জাতের চাষ হয়। হারিয়ে যেতে বসা ধানগুলিকে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কৃষি দফতর। জানা গিয়েছে, ম্যানিলায় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে বিভিন্ন দেশের ধানের বীজ সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানেও ওই সব ধানের বীজের সন্ধান করা হচ্ছে। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণাকেন্দ্রে সাড়ে তিন হাজার ধানের বীজের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানেও কিছু সুগন্ধী ধানের বীজও। সর্বত্রই খোঁজ চলছে। কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, অসম, সিকিম থেকে কিছু বীজ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি জেলার বিভিন্ন ব্লকে চাষ শুরু হয়েছে। হাঁসখালি ও ফুলিয়ার কৃষি খামারেও চাষ হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: লাখ লাখ টাকা-আংটির লোভ দেখিয়ে প্রতারণা! মাথায় হাত মুর্শিদাবাদের ভিক্ষুকের]
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনায় হিঙ্গলগঞ্জ, জলঙ্গি, কোচবিহার-১, জলপাইগুড়ি সদর, সিউড়ি-১, বলাগড়, রায়গঞ্জ, সোনামুখি, পাথরপ্রতিমা, গঙ্গারামপুরে সুগন্ধী ধানের চাষ হচ্ছে। হিঙ্গলগঞ্জ, জলঙ্গি, কোচবিহার-১, জলপাইগুড়ি সদর, সিউড়ি-১, বলাগড়, রায়গঞ্জ, সোনামুখি, পাথরপ্রতিমা, গঙ্গারামপুরে ভাল সাড়া মিলেছে। চলতি ধানচাষের থেকে হেক্টর প্রতি কৃষকের আয় নূন্যতম ২৫,৪০০ টাকা বেড়েছে।
নবান্ন জানিয়েছে, ২০১২-১৩ সালে ৪০হাজার হেক্টর জমিতে ৮০ হাজার মেট্রিক টন সুগন্ধী ধান চাষ হত। এখন ১,৪২,৯৬৯ হেক্টর জমিতে ৩,১৫,০০০ মেট্রিক টন ধান চাষ হচ্ছে। বীজের উৎপাদনও বেড়েছে। দশ বছর আগে ৮০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন হত। এখন ৪০০ মেট্রিক টন।