অভিরূপ দাস: যৌবনের আগে জীবন। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে স্তন, ডিম্বাশয় ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিয়ে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মৌসুমী রায়। ঠিক যেমনটা করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র সবুজ চোখের অপরূপা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি (Angelina Jolie)।
শেষ জানুয়ারির কথা। মৌসুমীর ডানদিকের স্তনে একটা ফুসকুড়ির মতো উঠেছিল। ক্রমশ তা টিউমারের আকার নিতে থাকে। প্রমাদ গুনেছিলেন মৌসুমী। খুব ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। “স্তন ক্যানসারে (breast cancer) আক্রান্ত হয়ে আমার মা মারা গিয়েছিলেন। তখন আমার বয়স মাত্র ১০। ভয় ছিল, তবে কি আমারও?” বলেন তিনি। সে আশঙ্কা থেকেই বাইপাসের ধারে অ্যাপোলো হাসপাতালে এসেছিলেন। অঙ্কো সার্জন শুভদীপ চক্রবর্তী ক্যানসারাস টিউমারটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও আশঙ্কার শেষ নেই। ভবিষ্যতে ওই জায়গা থেকে ফের স্তন ক্যানসার হতেই পারে। অদূর ভবিষ্যতে আবার স্তন ক্যানসার হতে পারে কি না তা দেখার জন্য একটি টেস্ট করা হয়। তার নাম বিআরসিএ জিন টেস্ট। এ টেস্ট করিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিনাও। পূর্বাভাস পেয়েছিলেন পুনরায় ক্যানসারের।
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে শহরে প্রথম ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন, বিহারের বিরল রোগ সাড়াল কলকাতা]
পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore) মৌসুমীও পরখ করে দেখতে চান তাঁর কপাল। টেস্টের রেজাল্টেই জড়ো হয় দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। দেখা যায়, ফের স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। মৌসুমীর কথায়, “অ্যাঞ্জেলিনা জলির বিষয়টি আমি জানতাম। ক্যানসারের সম্ভাবনা সমূলে নির্মুল করতে নিজের ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিয়েছিলেন নায়িকা। কিন্তু সে অস্ত্রোপচার এ দেশে যে হয় তা জানতাম না। সার্জন শুভঙ্করবাবু বলেন এই অস্ত্রোপচার অ্যাপোলোতেই হয়। গোটা বিষয়টিতে আমার স্বামী সবসময় আমার পাশে ছিল।” তারপর? জোলির মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হননি মৌসুমী। হলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের অন্যতম অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ক্যানসার এড়াতে শুধু স্তন নয়, বাদ দিয়ে দিয়েছেন নিজের ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব। স্তন ক্যানসার ঘটাতে পারে এমন জিন (বিআরসিএ-১) খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর শরীরে। একইভাবে মৌসুমীর শরীরেও যা মিলেছিল। জোলির পথ বেছে নিয়ে খুশি মৌসুমী। সাত বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে তাঁর। মৌসুমীর কথায়, “আমি চলে গেলে ওর কি হবে? আমার বেঁচে থাকার লড়াই ওর দিকে তাকিয়ে।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে এইভাবে আগাম ডিম্বাশয় কেটে বাদ দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে কলকাতাতেও। কিন্তু স্তন ক্যানসারে কেন ডিম্বাশয় বাদ দিতে হবে? কলকাতার চিকিৎসকদের দাবি, স্তন ক্যানসারের জন্য ‘ইস্ট্রোজেন হরমোন’ এক ধরনের অনুঘটক। ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে। সেই ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের উৎস ডিম্বাশয় দু’টি কেটে বাদ দিলেই (যাকে উফারেক্টমি বলা হয়) ঝামেলা চুকে যায়। তবে ক্যানসার প্রতিরোধে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর তা নিয়ে চিকিৎকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন শোভন-বৈশাখী! অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের পর জল্পনা]
কলকাতার বেশ কিছু ক্যানসার চিকিৎসক বলছেন, উফারেক্টমি করে দু’টি ডিম্বাশয় বাদ দিলে মহিলাদের স্তন ক্যানসারের (বিশেষ করে যাঁদের শরীরে বিআরসিএ-১ বা ২ জিন রয়েছে) সম্ভাবনা অনেক কমানো যায়। চিকিৎসকদের হিসাবমতো কলকাতায় গত এক বছরে অন্তত ৯ জন মহিলা উফারেক্টমি করেছেন। ভারতের শহরাঞ্চলে মহিলারা যতরকম ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে স্তন ক্যানসারের হার সব চেয়ে বেশি। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর নতুন করে ১৪ হাজার মহিলার দেহে এই ক্যানসার পাওয়া যাচ্ছে।