shono
Advertisement

Breaking News

‘ওর জীবন নিয়ে অসামান্য সিনেমা হয়’, বন্ধু তাপসের স্মৃতিচারণায় চিরঞ্জিৎ

'সংবাদ প্রতিদিন'-এর জন্য কলম ধরলেন অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। The post ‘ওর জীবন নিয়ে অসামান্য সিনেমা হয়’, বন্ধু তাপসের স্মৃতিচারণায় চিরঞ্জিৎ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:25 PM Feb 19, 2020Updated: 04:39 PM Feb 21, 2020

চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী:  ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ বলত লোকে আমাদের! আমি, বুম্বা আর তাপস। আজ লোকে প্রয়োজনীয় কৃতিত্ব দেবে কি না জানি না। তারা ভুলে গেছে কি না জানি না। কিন্তু উত্তমকুমার মারা যাওয়ার পর আটের দশকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির খুব বিধ্বস্ত সময়ে এই ত্রয়ী প্রচুর টেনেছিল। সঙ্গে রঞ্জিত মল্লিকের নামও করতে চাই। সেই সময়ে সাড়ে সাতশো সিনেমা হল ছিল রাজ্যে। আজ সেটা নেমে দাঁড়িয়েছে দুশো-আড়াইশোতে। শুধু এই স্ট‌্যাটাসটাই বলে দিচ্ছে যে, বাঙালি দর্শকদের আমরা চারজন নিশ্চয়ই আবিষ্ট রাখতে পেরেছিলাম। নইলে এতগুলো হল রমরম করে চলত না।

Advertisement

বাংলা ছবিতে আমার আসা ১৯৭৯ সালে। তাপস এল এক বছর পরে ‘দাদার কীর্তি’ নিয়ে। শুধু এল না। আলোড়ন ঘটিয়ে এল। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আবির্ভাবেই এরকম সুপারস্টার হয়ে যাওয়ার আর নজির আছে কি না মনে করতে পারছি না। চন্দননগর থেকে আসা একটা ছেলে রাতারাতি কলকাতার বুকে সুপারস্টার হয়ে গেল।  এরপর ‘সাহেব’, ‘গুরুদক্ষিণা’-কী কী সব ছবি করেছে! তাপসের স্টারডম ওকে ক্রমশই যেমন ওপরে তুলছিল, ভাবাই যায়নি শেষের দিকটা এমন ট্র‌্যাজিক আর ভঙ্গুর হবে। রাজেশ খান্নারও শেষ দিকটা খুব ট্র‌্যাজিক। ভেবেছিলেন একটা হিট ছবি নিয়ে আবার ফেরত আসতে পারবেন। সেটা সম্ভব হওয়ার আগেই কালান্তক রোগ তাঁকে নিয়ে যায় পরপারে। কিন্তু রাজেশের শেষটাও এত মর্মান্তিক নয়। তাপসের যেমন দ্বিতীয় ইনিংসের ভাগ‌্য ক্রমশই খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে। মেঘ কালো থেকে আরও কালো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গ্রহের ফের ওকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিল। এত হিট ফিল্ম ও করেছে। আজ ভগ্নহৃদয়ে বন্ধু ও সহকর্মী হিসেবে মনে হচ্ছে ভবিষ‌্যতে ওর ওপরেই একটা দুর্ধর্ষ ছবি হবে। মাল্টিকালার হিট ছবির সব রকম উপাদান যে ওর জীবনে মজুত ছিল।

প্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক হয়েও এত বন্ধুত্ব ছিল আমাদের যে, পাস্ট টেন্সে কথা বলতে শুরু করে কেমন অদ্ভুতই লাগছে। টিভিতে পরের পর শোকবার্তা দেখছি। শুনছি। আমার নিজের কেন জানি না মনে হচ্ছে এই যে শুরুতে ওকে আমার বা বুম্বার মতো স্ট্রাগল করতে হয়নি, স্ট্রেট চন্দননগর থেকে রাজপথে এসে বসেছিল, এটাই হয়তো বাকি জীবনে ওর কাল হল। আজ মনে হচ্ছে মানুষের জীবনে শুরুর দিকের ব‌্যর্থতা আর স্ট্রাগলের অনেক মূল‌্য আছে। কারণ তা জীবনের নানান বাধা-বন্ধের সঙ্গে লড়াই করার শিক্ষা জোগায়। তাপসের সেই শিক্ষাটাই হয়নি। তাই কেরিয়ারে দুর্যোগ আসামাত্র ও দিগভ্রষ্ট হয়ে গেছিল। নানান ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
ফিল্মের কেরিয়ার এবং রাজনীতি- দুটোই জীবনের এমন শাখা যেখানে সামান‌্য হলেও ‘ডিপ্লোম‌্যাসি’ করে চলতে হয়। তাপসের প্রবলেম ছিল, ও ‘ডিপ্লোম‌্যাসি’ ব‌্যাপারটাই বুঝত না। ওর চলে যাওয়ার খবর শুনতে শুনতে সেই অমলিন হাসিটা মনে পড়ছে। সারল্যে ভরা সেই হাসি তাপসকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছিল। আর সেই সারল‌্যই অবচেতনে ওর গুপ্ত ঘাতক হয়ে হাজির হল। সারল‌্যই হিট করাল। সারল‌্যই বিদায়বেলায় ফ্লপ উপহার দিল।

[আরও পড়ুন: ‘বন্ধু তোকে শিল্পী হিসাবেই মনে রাখবে’, তাপসের মৃত্যুতে স্মৃতিচারণা প্রসেনজিতের]

কী কী সব চরিত্র করেছে তাপস! ‘সাহেব’ হোক কী ‘দাদার কীর্তি’। এর একটা চরিত্রও আমি ঠিকভাবে করতে পারতাম বলে মনে করি না। শেষ ওর সঙ্গে দেখা হল অভিষেক ব‌্যানার্জির মেয়ের জন্মদিনে। পিসি চন্দ্র গার্ডেন্সে। আর তার আগে শুটিংয়ে শেষ দেখা হয়েছিল রাজা সেনের একটা ছবিতে। ছবির নাম ‘কর্নেল’। আজও মুক্তি পায়নি। তাপস করবে শুনে আমি একটু অবাক হয়ে গেছিলাম। কারণ রোলটা ছিল ভিলেনের। যাকে আমি ধরে নিয়ে যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত তাপস কিন্তু করেছিল। তখনই আমি লক্ষ‌্য করি ওর মধ্যে উল্লেখযোগ‌্য পরিবর্তন এসেছে। চুপ করে বসে থাকে। প্রাণোচ্ছল ভাবটা সম্পূর্ণ উধাও। মনটা চঞ্চল হয়ে গেছে।

আমার মনে হয় বেশ কয়েক বছর আগে ওই গাড়ি অ‌্যাক্সিডেন্ট হওয়াটা তাপসের জীবনে একটা বিশাল সেটব‌্যাক। মাথায় অত বড় চোট। সেলাই। সব মিলে কোথাও যেন তাপস ঘেঁটে গেল। চুল কমে যাওয়ায় উইগ পরতে শুরু করে। এই সময় অনেক অভিনেতা হয়তো দাঁতে দাঁত চেপে ছবিতেই পড়ে থাকত। তাপস অন‌্যদিকে মন দেয়। ওই যে গানটায় লিপ দেওয়া ওকে এত জনপ্রিয় করেছিল, ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে/নিয়ো না নিয়ো না সরায়ে’। ফিল্মের ভাগ‌্য যেন চিরতরে সরেই যায়। একমুঠো করে নিয়মিত ওষুধ খেত সেই সময় থেকেই। মাঝখানে কয়েক বছর টানা যাত্রা করে গেল। আমি জানি না যাত্রার লাইফের ওই অনন্ত খাটাখাটনি, রাতবিরেতে ট্র‌্যাভেলিং, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া-এগুলো শরীরের আরও ক্ষতি করেছিল কি না। আজ খুব আক্ষেপ হয়। এত ট‌্যালেন্ট ছিল। সেটাকে ডিসিপ্লিন দিয়ে কেন যে বাঁধল না!

[আরও পড়ুন: তাপস পালের শেষযাত্রাতেও রাজনৈতিক তরজা, মমতাকে পালটা খোঁচা বাবুল-সায়ন্তনের ]

দুষ্টগ্রহের এমনই খপ্পরে পড়ল যে, ফেরত আসবে কী, পরপর বিতর্কে ইমেজটাই গেল চুরমার হয়ে। প্রথমে বেফাঁস কিছু বলে ফেলল। সেটা নিয়ে জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া। তারপর ওকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। কী আশ্চর্য যে, তৃণমূলের ওপর প্রতিশোধ নিতে কিনা বেছে নেওয়া হল অভিনেতা তাপস পালকে! অভিনয়ে ফেরত আসার জন‌্য, ভাল ছবি করার জন‌্য এত আকুতি ছিল। কিন্তু এতসব বিড়ম্বনার মধ্যে কে নেবে ওকে? অনেকের মনে হচ্ছে বাংলা আর্বান ছবির নতুন পরিচালকেরা ওকে ব‌্যবহার করেনি। সৃজিত-কৌশিক-শিবুরা কেন ওর কথা ভাবেনি? এটা যেমন সত্যি, তেমনই ওর ভাবমূর্তিটা এমন হয়ে গেছিল যে, সবাই সন্ত্রস্ত থাকত। অথচ আজকের বাংলা ছবির এই রিয়েলিস্টিক অভিনয়, তার প্রথম প্রবক্তা তাপস পাল। ওর প্রথম ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। যে অভিনয় ও করেছে, ঠিক সেই সিম্পল, নাটক-বিবর্জিত অভিনয়ই আজকের আর্বান ছবির পরিচালকেরা চাইছেন। এরকম ধূমকেতুর মতো উত্থান। তারপর পরের পর ট্র‌্যাজিক পরিণতির মধ‌্য দিয়ে যেতে যেতে মৃত‌্যু। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি কখনও দেখেনি। কখনও শোনেওনি। বললাম না, তাপসের জীবন নিয়ে একটা অসাধারণ সিনেমা হয়।

The post ‘ওর জীবন নিয়ে অসামান্য সিনেমা হয়’, বন্ধু তাপসের স্মৃতিচারণায় চিরঞ্জিৎ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার