সোমনাথ লাহা: টালিগঞ্জের ছোটপর্দা ও বড়পর্দার সৌজন্যে বেশ পরিচিত মুখ এনা সাহা। টলিউড ছাড়িয়েও এনা পা রেখেছেন দক্ষিণী ছবির জগতে। ১৭ মে মুক্তি পেয়েছে এনা অভিনীত হরর রোড মুভি ‘ভূত চতুর্দশী’। ছবিতে এনার বিপরীতে রয়েছেন আরিয়ান ভৌমিক। ছবিতে নিজের অভিনীত চরিত্র-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ফলোয়ারের প্রসঙ্গে রীতিমতো খোলামেলাভাবে অনেক কথাই জানালেন এনা।
ইনস্টাগ্রাম-সহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তোমার ফলোয়ারের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। রহস্যটা কী?
এনা: আমি সত্যি বলছি, এর রহস্যটা আমি নিজেও জানি না। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এত কেন ফলোয়ার, এত লাইকস, এত শেয়ার এটা আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে। এত কমেন্টস কী করে? কিন্তু আমি নিজেই জানি না। লোকজন নিশ্চয়ই আমাকে ভালবাসেন। তাঁরা আমায় দেখতে পছন্দ করেন। আমার ছবি পছন্দ করেন। আমি খুবই thankful তাঁদের কাছে, আমি তো ভাবতেই পারি না। আমি একটা প্রচণ্ড সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সেখান থেকে রোজ স্কুলে যেতাম। অবশ্য খুব ছোটবেলা থেকেই আমার অভিনয়ের জার্নিটা শুরু হয়েছে। ভাবতেই পারিনি, অভিনয়ের অলিন্দেই বড় হয়েছি। আমি নিজেকে দেখি আর আমার বন্ধুদের দেখি। এতটা আলাদা লাগে। একেক সময় নিজের উপর মনে মনে রাগও হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে পারি না। বন্ধুদের মতো ঘুরতে চলে যেতে পারি না। তবে কোনও কলেজে বা ফাংশনে বা কোনও মলে যখন শপিংয়ে যাই, দেখি কত মানুষ আমায় চেনেন। তাঁরা আমার কাজের প্রশংসা করেন। আমার সঙ্গে সেলফি তুলতে চান। আশীর্বাদ করেন আমায়। তখন খুবই ভাল লাগে। মনে হয়, যেটা পেয়েছি সেটা অনেক বড় প্রাপ্তি আমার কাছে।
‘ভূত চতুর্দশী’ তো এককথায় হরর রোড মুভি। এরকম একটা ছবিতে তুমি অন্যতম চরিত্রে। কী বলবে?
এনা : প্রথমে যখন এই ছবির ট্রেলার বেরল তখন সকলে বলল এটা তো ভৌতিক ছবি। আমরা সকলকে সেই ভুল সংশোধন করে বললাম, এটা শুধুমাত্র ভৌতিক ছবি নয়। এটা অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার হরর ফিল্ম (হাসি)।
বুঝলাম। তা এরকম ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই অন্যরকম?
এনা : মজার ব্যাপারটা হল, এই ছবির গল্পটা যখন আমি মৈনাকদার (কাহিনি মৈনাক ভৌমিকের) কাছে শুনেছিলাম আমি একদম বাচ্চাদের গল্প শোনার মতো মন দিয়ে শুনছিলাম। তারপর নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কী হল? আকর্ষণটা তখন থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ভেবে দেখো, চিত্রনাট্য নয়, গল্প শুনেই এতটা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম (হাসি)। আমাকে মৈনাকদা গল্পের সব চরিত্রগুলো রণো, শ্রেয়া, পৃথা, দেবু সম্পর্কে বলেছিল। তারপর গল্পটা শুনিয়েছিল।
তাই নাকি?
এনা : হ্যাঁ। তারপর গল্পটা শোনার পরেই আমি শ্রেয়ার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করি। আমার কল্পনায় মনে হয়েছিল আমিই শ্রেয়া। মৈনাকদা আমায় যখন জিজ্ঞেস করল আমি কোন চরিত্রটা করতে চাই? আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম শ্রেয়ার চরিত্রটা, কারণ আমি নিজেকে শ্রেয়াতেই দেখেছি। মৈনাকদা তখন বলল, আমিও তোকে শ্রেয়ার জন্যই ভেবেছি। আমি এটা শুনে প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলাম (হাসি)।
সেটা কেন?
এনা : কারণ আমার মনে হয় যাঁরা ভূতে বা ভগবানে বিশ্বাস করেন, এমনকী নেগেটিভ বা পজেটিভ এনার্জির প্রতি যাঁদের আস্থা রয়েছে, নারী/পুরুষ নির্বিশেষে তাঁদের সবার মধ্যে একটা শ্রেয়া লুকিয়ে রয়েছে। তাঁরা সবাই এই চরিত্রটার সঙ্গে রিলেট করতে পারবেন।
ছবিতে তোমার চরিত্রটা নিয়ে কিছু বলো?
এনা : শ্রেয়া কুসংস্কার আচ্ছন্ন, মায়ের আদুরে মেয়ে। খুবই সিরিয়াস। নিজের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি অসম্ভব প্রোটেক্টিভ, বিচক্ষণ, ভেবেচিন্তে কথা বলে, কাউকে আঘাত করে কিছু বলে না। শ্রেয়ার মনটা নরম। শ্রেয়ার একটা অতীত রয়েছে। যেটার জন্য শ্রেয়ার কিছু সমস্যাও হয়। সেটা একমাত্র ওর মা আর রণো বোঝে। রণোকে (আরিয়ান) শ্রেয়া খুব ভালবাসে। এছাড়াও শ্রেয়া নিজের ছোটবেলার বন্ধু ও বেস্ট ফ্রেন্ড পৃথা (দীপশ্বেতা)-কেও খুবই ভালবাসে।
আরিয়ানের সঙ্গে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কাজ করলে। কী বলবে?
এনা : ২০১৮-তে আমি শুধু আরিয়ানের সঙ্গেই শুটিং করেছি। আমার সহ-অভিনেতা বলতে ও-ই ছিল। আমরা খুব ভাল বন্ধু। আমরা দু’জনেই দু’জনকে খুব ভাল বুঝি। আমাদের দু’জনের মধ্যে কমফর্ট জোন, বন্ডিংটা আমি যতজনের সঙ্গে কাজ করেছি, সেই সমস্ত সহ-অভিনেতার থেকে অনেক বেশি। আমরা পরস্পরকে খুব ভাল বুঝতে পারি। তাই খুব নিশ্চিন্তে কাজ করা যায় আর পর্দায় আমাদের সেই কেমিস্ট্রিটা সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে।
তোমার এর পরবর্তী প্রোজেক্ট বা কাজ কী আসছে?
এনা : আমি এরপরে তেলুগু/তামিল ছবিতে ডেবিউ করতে চলেছি। আমি ভীষণই এক্সাইটেড, আমার পরবর্তী রিলিজ ছবি তেলুগু। ছবির নাম ‘মোনালিসা’। গোয়ায় শুটিং করেছি ছবিটার। জিথান রমেশ রয়েছেন ছবিতে। উনি ভিলেন হয়েছেন। ‘ভূত চতুর্দশী’ রিলিজের পরে একটা ছোট্ট ব্রেক নিয়ে ওই ছবিটার প্রোমোশন শুরু করে দেব।
আর বাংলা ছবি…
এনা : কথাবার্তা চলছে। এখনও ফাইনাল হয়নি। তাই কনফার্ম কিছু এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
ওয়েব সিরিজ করছ না?
এনা : এখন তো আমি সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সিনেমার কাজ শেষ করেই একটা ওয়েব সিরিজ নিশ্চয়ই করব।
ছবির প্রয়োজনে বোল্ড দৃশ্যে অভিনয় করতে তুমি কতটা স্বচ্ছন্দ?
এনা : আমার নিজেরও বোল্ড সিন বা খোলামেলা দৃশ্য করতে অসুবিধা রয়েছে। কারণ আমি আমার পরিবারে ভাই-বোনেদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আমার ভাই-বোনেরা সবাই আমার কাছেই থাকে। কথাটা খুব unprofessional শুনতে লাগতে পারে। কিন্তু আমার কোনও গসিপ বা খারাপ খবর নিউজ পেপারে বা কোথাও বেরলে আমার ভাই-বোনেরা স্কুলে গেলে সমস্যায় পড়ে। এমনও হয়েছে, অন্য বাচ্চার অভিভাবকরা আমার ভাই-বোনেদের সঙ্গে তাঁদের ছেলেমেয়েদের মেলামেশা করতে বারণ করে দিয়েছেন। এমনকী তাদের শিখিয়ে দিয়েছেন আমার ভাই-বোনেদের স্কুলে যে হোমওয়ার্ক দেওয়া হয়েছে সেটা না দিতে।
আমার প্রফেশনাল কাজের জন্য ওরা সমস্যায় পড়ুক, এটা আমি চাই না। টুকটাক বোল্ড সিন আমি ছবিতে করেছি। কিন্তু তার বেশি আমি করতে চাই না। আমার দিদা, মাসিও আমার সঙ্গে থাকেন। ভাই-বোন, ওদের সকলের কথা ভেবেই আমার বোল্ড সিন করায় এই মুহূর্তে আপত্তি বা সমস্যা রয়েছে। ভাই-বোনরা আগে স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠুক, তারপর ভেবে দেখব।
এনা, এমন কোনও চরিত্র রয়েছে, যেটা তুমি করতে চাও? একদম তোমার স্বপ্নের চরিত্র। পেলেই তুমি সেই চরিত্র করার অফারটা হাতছাড়া করবে না।
এনা : আমার ভীষণ ইচ্ছে একটা নেগেটিভ চরিত্র করার। একদম আপাদমস্তক নেগেটিভ চরিত্র। গ্রে শেড নয়, কিন্তু পুরোদস্তুর ব্ল্যাক শেড। মিষ্টি একটা মেয়ে। যাকে দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না যে, সে এমন। মিষ্টি মুখ নিয়ে আমি এরকমই একটা নেগেটিভ চরিত্র করতে চাই। এটাই আমার ড্রিম বা স্বপ্ন বলতে পারো।
The post খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয়ে কতটা স্বচ্ছন্দ্য? একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন এনা appeared first on Sangbad Pratidin.