বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, অযোধ্যা: বাংলার শিল্পের ছোঁয়া ‘রামরাজ্যে’। রামমন্দিরে প্রবেশ পথে দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তার দু’ধার সজ্জিত হবে এক বাঙালি শিল্পীর হাতের জাদুতে। রামায়ণের একশোটি খণ্ড মূর্তি দিয়ে সাজাবেন নদিয়ার মৃৎশিল্পী রঞ্জিৎ মণ্ডল। তার জন্য ১ হাজার মূর্তি তৈরিতে দিন রাত এক করছেন তিনি। ১১ বছর টানা পরিশ্রম করে এখনও পর্যন্ত ৫৫৪টি মূর্তি তৈরি করতে পেরেছেন। আরও ৪৪৬টি মূর্তি তৈরি করতে আরও তিন থেকে চার বছর লাগবে। তারপরেই একটু একটু করে সেজে উঠবে রামমন্দিরের করিডোর। আবার রামলালার স্নানের জন্য ১০১ কেজি সুন্দরবনের মধু পৌঁছল অযোধ্যায়। পাঠিয়েছেন সাংসদ দিলীপ ঘোষ।
বর্তমানে অসমের কাছাড় জেলার বাসিন্দা হলেও রঞ্জিতের আদি বাড়ি নদীয়ার ঘূর্নিতে। পুতুলের জন্য বিখ্যাত নদিয়ার এই জনপদ। সেখানেই কাকার কাছে হাতে খড়ি রঞ্জিতের। হাতে কলমে মূর্তি বানানোর প্রশিক্ষণ। কালচক্রে অসমে চলে যেতে হয়। সেখানেই সংঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হন। নজরে পড়েন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রয়াত অশোক সিঙ্ঘলের। রামমন্দির মামলা নিয়ে যখন দেশজুড়ে ঝড় বইছে তখন অযোধ্যায় ডাক পড়ে তাঁর। কী করতে হবে বুঝিয়ে দেন অশোক সিঙ্ঘল। নির্দেশ দেন, রামমন্দিরের করিডোর সাজিয়ে তুলতে হবে। তাই কাজ শুরু করে দিতে হবে। সেইমতো মূর্তি নির্মাণের কাজে হাত দেন রঞ্জিৎ। মুখরা ধামে দশরথের পুত্রপ্রাপ্তি যজ্ঞের গল্প দিয়ে শুরু করেন মূর্তি নির্মাণের কাজ। সেখান থেকে মা কৌশল্যার কাছে লালন পালন। গুরুকুলে বশিষ্ঠ মুনির কাছে অস্ত্র শিক্ষা থেকে তারকা বধ। বনবাস থেকে রাম-রাবণ যুদ্ধ। শেষে রাজ্যাভিষেক। একে একে মূর্তি বানিয়ে চলেছেন। তৈরি হচ্ছে খণ্ডচিত্র। মূর্তি বানাতে ব্যবহার করছেন সিমেন্ট, স্টিলের জালি, বালি, রড ও কেমিক্যাল মেশানো রঙ। ঝড়-বৃষ্টিতে যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান রঞ্জিৎ।
[আরও পড়ুন: ২০১৯-এ অযোধ্যা মামলার রায় দেওয়া ৫ বিচারপতিকে রামমন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ]
এর মধ্যেই আবার রামলালার জন্য সুন্দরবনের পৃথিবী বিখ্যাত মধু পৌঁছল রাম রাজ্যে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দপ্তরে জমা পরেছে সেই সুস্বাধু মধু। সোমবার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’। ওই দিন রামলালাকে বিভিন্ন নদী, সাগর, হ্রদের জলে স্নান করানো হবে। থাকছে ঘি, মধু, ডাবের জল।। কোন রাজ্য থেকে কী আসবে আগে থেকে পরিষদই ঠিক করে নিয়েছিল। বাংলার ভাগে পড়ে মধু। আসলে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে যে মধু পাওয়া যায়, তা দেশের সেরা। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। রামজন্মভূমি আন্দোলনে দিলীপ ঘোষ যুক্ত ছিলেন। তাঁকেই বাংলার মধুর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিহারের ঘি, কর্নাটকের চন্দন, কেরলের ডাব- সব এসে গিয়েছে অযোধ্যায়। সুন্দরবনের মধু রয়েছে ১০১ কেজি। দিলীপ ঘোষ জানান, “রামলালার অভিষেক মানে একটা আন্তর্জাতিক ব্যাপার। শ্রেষ্ঠ উপকরণ যেমন চাই, তেমনই পরিমাণেও তো বিরাট হতে হবে। সেই হিসাবেই পাঠানো হয়েছে।” দিলীপ বলেন, “ওখানকার কার্যকর্তাদের ছ’মাস সময় লেগেছে এই মধু সংগ্রহ করতে। তার পরে সব একত্র করে পাঠানো হয়েছে অযোধ্যায়। আমরা এখন অযোধ্যায় যাচ্ছি না বটে, তবে আমাদের নৈবেদ্য পৌঁছে গিয়েছে।”