শেখর চন্দ্র, আসানসোল: এবার ভাষা সন্ত্রাসের শিকার হলেন রূপনারায়ণপুরের ব্যবসায়ী! বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সীমানা শহর। বাংলা পক্ষ এবং রূপনারায়ণপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতি এই ঘটনার বিহিত চেয়ে সোমবার অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ একটি বাইকে তিন যুবক রূপনারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয় ব্যবসায়ী অনুপ মাজির দোকানে সিগারেট কিনতে আসে। তারা ৬ টাকা গুগল পে-তে মেটান। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার ঘোষণাটি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রে বাংলা ভাষায় হয়। কিন্তু কেন বাংলায়? হিন্দিতে হয়নি কেন? এই নিয়েই তর্ক জুড়ে দেয় ওই তিন ক্রেতা। অনুপ মাজির উদ্দেশে অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করতে শুরু করে। বলে, হিন্দিতেই এই ঘোষণা হতে হবে। এই সময় স্থানীয় কল্যানেশ্বরী মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং ওষুধের দোকানের কর্মীরা সেখানে ছুটে গেলে ওই তিন যুবক বাইকে চেপে পালিয়ে যায়। কিন্তু রাত প্রায় দশটা নাগাদ যখন অনুপবাবু দোকান বন্ধ করছিলেন ঠিক সেই সময়ে ওই তিন যুবক ডাবর মোড়ে ফিরে আসে। শুধু তাই নয়, এক যুবক বাইক থেকে নেমে হঠাৎই অনুপবাবুকে আক্রমণ করে। তার অতর্কিত ঘুঁষিতে অনুপবাবুর চোয়াল ফেটে রক্ত পড়তে থাকে।
অভিযোগ, অনুপবাবুর উপর চড়াও হওয়ার পরেই অভিযুক্ত যুবকেরা এলাকা ছাড়ে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় অনুপবাবুকে স্থানীয় লোকজন পিঠাইকিয়ারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার ক্ষতস্থানে দুটি সেলাই করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বাজারের সমস্ত ব্যবসায়ী এবং বাংলা পক্ষের মানুষজন রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িতে জমায়েত করেন। বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তাদের আশ্বাস দেন রূপনারায়ণপুর ওসি অরুনাভ ভট্টাচার্য। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে কালীপুজোর মেলা উপলক্ষে হিন্দুস্তান কেবলস হাইস্কুল মাঠে যাওয়া এক ব্যক্তিকে জোড়বাড়ির এক যুবক বাংলা ভাষা নিয়ে কটূক্তি করেছিল। বলেছিল, বাংলা বলতে হলে বাংলাদেশে যান। সেই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলা পক্ষ। পুলিশ এবং রাজনৈতিক মহলও ওই যুবকের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে ওই যুবক এবং তার পরিবার বিষয়টি মিটমাট করে নেন।
কিন্তু সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবার বাংলা ঝাড়খণ্ডের সীমানা এলাকায় রূপনারায়ণপুরে ঘটায় সকলেই অত্যন্ত ক্ষিপ্ত। তাঁরা চাইছেন এই ধরনের অসহিষ্ণুতা বন্ধে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এই ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। হতে পারে বাংলা- ঝাড়খণ্ড সীমানার মিহিজামের বাসিন্দা তারা। বাংলা পক্ষের তরফে জেলা সম্পাদক অক্ষয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সীমানাবর্তী এলাকায় এই ধরনের অত্যাচার বাড়ছে। এর প্রতিবাদে বড় আন্দোলন শুরু হবে। রূপনারায়ণপুর পুলিশ প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা হবে।