অভিরূপ দাস: সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বক্তব্য রাখতে গেলে “জয় শ্রীরাম” স্লোগান ওঠে। অপমানিত মুখ্যমন্ত্রী কিছু না বলেই নেমে যান। অন্যদিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার জন্য সোশ্যাল সাইটে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ ও দেবলীনা দত্তকে নিশানা করে একদল দুষ্কৃতী। অনলাইনে গণধর্ষণের, খুনের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। রাজ্যে বারংবার মহিলাদের এই অপমানে সিঁদুরে মেঘ দেখছে টলিপাড়া। এর বিরুদ্ধেই সোমবার মেট্রো চ্যানেলের মুক্ত মঞ্চে সরব হন একঝাঁক বুদ্ধিজীবী। কোনও রাজনৈতিক রং ছাড়াই প্রতিবাদ সভায় হাজির ছিলেন অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহান (Nusrat Jahan), নাট্যকার কৌশিক সেন, অভিনেতা শংকর চক্রবর্তী, শিক্ষাবিদ অভীক মজুমদার, অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত, দেবলীনা দত্ত (Debolina Dutta), সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh), বাচিক শিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty), হরনাথ চক্রবর্তী, গৌতম ঘোষ, সুদেষ্ণা রায়ের মতো তারকারা। ছিলেন মহিলা কমিশনের অধ্যক্ষ লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও।
“এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার!” – এই স্লোগান দিয়েই একত্রিত হয়েছিলেন তারকারা। মুক্ত এই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নুসরত বলেন, “এ কোন দেশে আমরা বাস করছি। দুপুরে বাইরে যেতেও ভয় করছে।” এরপরই অভিনেত্রী-সাংসদ হুঙ্কার দেন, বাংলার মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি দিলে তাঁদের হাতেও বঁটি ও ঝাঁটা রয়েছে। মঞ্চ থেকে সোজাসুজি ভারতীয় জনতা পার্টিকে (BJP) আক্রমণ করেন নাট্যকার কৌশিক সেন (Kaushik Sen)। তাঁর কথায়, “আমার দেশ বলতে আমি কি বুঝি সেটা ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যখ্যা করে দিচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহ যেভাবে দেশকে ভক্তি করে আমাদের সেভাবে ভক্তি করতে হবে। আমি আমার মতো করে দেশকে ভালবাসতে পারব না। এটা তো এক ধরনের ফ্যাসিবাদ।” ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক রং বিচার না করেই প্রতিবাদের জন্য এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি।
যাঁদের ভারচুয়াল নিগ্রহের প্রতিবাদে এই সভা, সেই সায়নী ঘোষ ও দেবলীনা দত্তও ক্ষোভ উগড়ে দেন। সায়নী বলেন, “ভগবান রামের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধিতা নেই। কিন্তু জয় শ্রীরাম স্লোগান যাঁরা দিচ্ছেন তাঁরা এটাকে ওয়ার ক্রাই হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাঁদের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি মেলে না।” দেবলীনা প্রশ্ন তোলেন, “কোনও অপরাধের শাস্তি কখনও ধর্ষণ হতে পারে?” তরুণজ্যোতি তিওয়ারির নাম উল্লেখ করে জানান, সমস্ত কুকথার প্রমাণ রাখা হয়েছে। পরে যেন কেউ না বলেন এই কথা তাঁরা বলেননি। সোশ্যাল মিডিয়ার লাগাতার আক্রমণে তাঁর মায়ের শরীর খারাপ হচ্ছে সেকথাও জানান। এরপরই দেবলীনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ক্ষমতায় আসার আগেই রেপ থ্রেট! এলে তো রেপ হবেই।”
মেট্রো চ্যানেলে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজক ছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। সেখানে বক্তব্য রাখেন অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তও। তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের পর সবটা শেষ হয় না। মেয়েদের মেরে ফেলার কথা যাঁরা বলছেন তাঁদের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে।” অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে যখন অপমান করা হচ্ছে সে সময় সেখানে উপস্থিত দেশের সর্বোচ্চ প্রধান। প্রধানমন্ত্রী। তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত করলেন না। এর মানে তাঁর পরোক্ষে সমর্থন রয়েছে।”