সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুজোর মুখে সারা বাংলা কবিতা উৎসব মিলিয়ে দিয়ে গেল নবীন-প্রবীণ কবিদের। সপ্তাহান্তে পুরুলিয়া (Purulia) পুরসভার স্বয়ংসিদ্ধা সভাগৃহে এই কবিতা উৎসব হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন কথা সাহিত্যিক ও কবি সৈকত রক্ষিত। তাঁর কথায়, “এত বড় কবিতা উৎসব (Poetry Festival) এর আগে পুরুলিয়ায় হয়নি।” ‘নাটমন্দির’ পত্রিকার আয়োজনে এই কবিতা উৎসবে জেলায় নাট্যচর্চায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য নাট্যব্যক্তিত্ব অনুপ মুখোপাধ্যায়কে ‘নাটমন্দির’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রায় তিন দশক আগের কথা। ১৯৯৫ সালে পুরুলিয়ার জগন্নাথ কিশোর মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি অনার্সের এক ছাত্র স্বপ্ন দেখেছিল নিয়মিত একটি কবিতা পত্রিকা (Magazine) প্রকাশ করার। আদর্শ হিসেবে সামনে ছিল প্রতি ১৫ দিন অন্তর কলকাতা থেকে প্রকাশ পাওয়া কবিতাপাক্ষিক পত্রিকা। পত্রিকার নাম বেছে দিয়েছিলেন সেই ছাত্রের শিক্ষক অধ্যাপক ছন্দম দেব। নামাঙ্কন করে দিয়েছিলেন প্রয়াত কবি নাসের হোসেন। অংশুমান করের সম্পাদনায় প্রকাশ পেয়েছিল ‘নাটমন্দির’। হয়ে উঠেছিল নয়ের দশকের কবিতাচর্চার একটি প্রধান পত্রিকা। পশ্চিমবঙ্গ এবং তার বাইরের রাজ্যগুলিতেও বাংলা (Bengali) ভাষায় কবিতাচর্চা করা নয়ের দশকের প্রায় সমস্ত কবিই কবিতা লিখেছিলেন ‘নাটমন্দিরে’।
[আরও পড়ুন: ‘ওই দেখো হাতি হাঁটছে!’ ফ্যাশন শোয়ে বিপাশাকে দেখে কটাক্ষ নেটিজেনদের]
১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা ‘নাটমন্দির’ নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ পেয়ে চলেছে আজও। এখন আবার নয়ের দশকের মতোই প্রতি মাসে নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে পত্রিকাটি। অংশুমান করের সঙ্গে সম্পাদক হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন আশিস গঙ্গোপাধ্যায়, অজয় গঙ্গোপাধ্যায় ও সেখ সাদ্দাম হোসেন। এই উৎসবের আকর্ষণ ছিল বিতর্ক সভা। বিতর্কের বিষয় ছিল, ‘মফস্বলের কবি-লেখকরা আজও বাংলা সাহিত্যে সমাদর পান না।’ এই মতের পক্ষে ও বিপক্ষের বক্তারা ছিলেন বিমল লামা, অনিশ্চয় চক্রবর্তী, অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় ও সব্যসাচী মজুমদার। বিতর্ক সভাটি পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে পুজোর মরশুমেও যেন আলাদাভাবে ছাপ ফেলে।
[আরও পড়ুন: ‘বন্ধু’ জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে চিনে পৌঁছলেন পুতিন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সম্মেলনে নজর ভারতের]
প্রায় শতাধিক কবি এই কবিতা উৎসবে কবিতা (Poems) পাঠ করেছেন। এই উৎসবে যেমন উপস্থিত হয়েছিলেন শিলিগুড়ির কবি রথীন্দ্রনাথ সাহা ও তন্ময় বসাক, মালদহের কবি সুদেষ্ণা মৈত্র, তেমনই সুদূর সুন্দরবন থেকে এসেছিলেন তরুণ কবি সুরজিৎ বেরা। পুরুলিয়ার স্থানীয় কবিদের মধ্যে কবিতা পাঠ করেন অশোক ঘোষ, জগন্নাথ দত্ত, দিলীপ বন্দোপাধ্যায়, সুকুমার মণ্ডল, সোমেন মুখোপাধ্যায়, সঞ্চিতা পাত্র, সুপ্রিয় দেওঘরিয়া প্রমুখ। উৎসব উপলক্ষে প্রকাশ পেয়েছে ‘নাটমন্দির’ কার্তিক ১৪৩০ সংখ্যা, বাঁকুড়ার ‘আর্ষ’ পত্রিকার গল্প সংখ্যা, আসানসোলের বায়স পত্রিকা ও সৃ প্রকাশন প্রকাশিত অংশুমান করের সাম্প্রতিকতম কবিতা পুস্তিকা ‘সম্পর্কফুল’।
‘নাটমন্দির’-এর সম্পাদক তথা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক অংশুমান কর (Angshuman Kar) বলেন, “১৯৯৬ সালে আর একবারই নাটমন্দির অনেকটা এইরকম একটি কবিতা উৎসবের আয়োজন করেছিল। তবে এবার সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। এরপর প্রতি বছর এই উৎসব পুরুলিয়া শহরে অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবে প্রতিবছরই পুরুলিয়ার একজন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে নাটমন্দির সম্মাননা প্রদান করা হবে।” এই কবিতা উৎসব মন ছুঁয়ে যায় জেলার সাংস্কৃতিক মহলের।