নব্যেন্দু হাজরা: কুমারী পুজো থেকে চণ্ডীপাঠ, সন্ধিপুজো থেকে মায়ের দর্পণ বিসর্জন। কোনও রীতিই এখানে বাদ নেই। সঙ্গে চলে রোজ সন্ধেতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দশমীতে চলে সিঁদুর খেলাও। পুজোর ক’দিন জার্মানি ঠিক যেন একটুকরো কলকাতা (Kolkata)।
জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহরে বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোর (Durga Puja 2022) বয়স মাত্র দুই। কিন্তু যে নিষ্ঠায় মায়ের আরাধনা এখানে হয়, তা বহু প্রবাসের পুজোতেই অনুপস্থিত। বাঙালি রীতি মেনে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে পুজো। বার্লিনের কয়েকশো বাঙালির দুর্গাপুজোর আনন্দ লুকিয়ে এখানকার এই পাঁচদিনের পুজোতেই। তবে এবারের পুজোর অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ রবি ঠাকুরের নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা, যা অষ্টমীর দিন সন্ধেয় মঞ্চস্থ হবে। তারই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। পুজোর ক’দিন সমস্ত দর্শনার্থীদের পাত পেরে খাওয়ানোর রেওয়াজও প্রবাশের অন্য পুজোর থেকে এই পুজোকে আলাদা করেছে। পুজোর কর্মকর্তাদের কথায়, দুপুর হোক বা রাত যখনই দর্শনার্থীরা আসুক না কেন, তাঁদের পেট ভরে খাওয়ানো হয়।
[আরও পড়ুন: কুড়মি সমাজের আন্দোলনের মাঝে কর্মবিরতিতে SBSTC’র অস্থায়ী কর্মীরা, ট্রেনের পর বন্ধ বাসও]
বাঙালিয়ানা এবং সুদূর প্রবাসে উৎসবের মরশুমকে উপভোগ করতে ২০২১ সালে এই পুজোর শুরু হয়। বার্লিন শহরের বুকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বার্লিন ইগনাইট ই ভি দ্বারা বার্লিন শ্রী হিন্দু গণেশ মন্দিরে ১-৫ অক্টোবর পুজো চলবে এবার। যাতে রয়েছেন সংগঠনের ১০০ জন সদস্য। গত বছর কুমোরটুলি থেকে মূর্তি গিয়েছে। তাই পূজিত হবে। ষষ্ঠীর সন্ধেয় পুজোর উদ্বোধন, তারপরই শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গে থাকছে পাঁচ দিনের বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নির্ভেজাল আড্ডা। নাচ-গান-আবৃত্তি। সবই চলে। সঙ্গে ছোটখাটো প্রতিযোগিতাও।
বার্লিনে আরও কয়েকটি পুজো হয়। যেগুলোর সবকটি পাঁচদিন ধরে বাঙালি রীতি মেনে যে হয়, তেমনটা নয়। কোনও কোনও পুজো উইকএন্ডেও হয়। এখানেই অন্যদের থেকে আলাদা এই পুজো। পুজোর পাঁচ দিনই খাবারের তালিকাকে ঢেলে সাজানো হয়। খিচুড়ি থেকে লাবড়া, চাটনি থেকে পায়েস, বাদ থাকে না কিছুই, যার সমস্ত ভার বহন করছেন বার্লিনে উপস্থিত প্রায় ১২টি ভারতীয় রেস্টুরেন্টের কর্ণধাররা। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, যত মানুষই আসুক না কেন, কেউ বাদ যান না। প্রত্যেককে বসিয়ে খাওয়ানো হয়। পুজোর কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ঘোষাল বলেন, ‘‘গতবছর থেকে শুরু হয়েছে আমাদের পুজো। একেবারে নিয়মনিষ্ঠা মেনেই পাঁচদিন ধরে হয় পুজো। সঙ্গে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হয় কুমোরী পুজোও। জার্মানির অন্য শহরে পুরোহিত থাকেন। তিনিই পুজো করেন।’’