মণিশংকর চৌধুরি, আগরতলা: গেরুয়া ঝড়ে ত্রিপুরায় ধসে গিয়েছিল বাম দুর্গ৷ মাণিক সরকারের দুর্গের পতন ঘটিয়ে মসনদে বসেছিলেন বিপ্লব দেব৷ বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র চোদ্দ মাসের মধ্যেই ত্রিপুরায় বইছে উলটো হাওয়া৷ রাজনীতিকদের মতে, ক্রমশই এরাজ্যে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে গেরুয়া শিবির৷সাংগঠনিক দক্ষতার অভাবে কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷আগরতলার অলিতে গলিতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির জনপ্রিয়তা যে হারে কমছে, ততোধিক হারে উঠে আসছে কংগ্রেস৷
[ আরও পড়ুন: ব্রুদের দাবি মেনে বিপাকে কমিশন, ভোটের আগে সন্ত্রাসের আবহ মিজোরামে]
রাজ্যে পঁচিশ বছরের বাম শাসনে ছেদ টেনে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল৷ তবে, মাঝের চোদ্দ মাসে শরিক আইপিএফটির সঙ্গে বিরোধ, ক্ষোভ, বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে৷ দুই দলের দ্বন্দ্বে ক্রমশই অসন্তোষের পারদ চড়ছে৷ তাই, ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে ত্রিপুরার রাজনীতি৷ এবার লোকসভা নির্বাচনে দু’টি আসনের মধ্যে আদিবাসী সংরক্ষিত পূর্ব ত্রিপুরা আসনটিতে প্রার্থী দিতে চেয়েছিল আইপিএফটি। বিনিময়ে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে বিজেপি প্রার্থীকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাঁরা। তবে, তাতে রাজি হয়নি বিজেপি৷ আইপিএফটি তাই দু’টি আসনেই লড়ছে। দুটি লোকসভা কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস৷ ত্রিপুরা পশ্চিম থেকে লড়ছেন সদ্য বিজেপি ছেড়ে দলে যোগ দেওয়া সুবল ভৌমিক৷ ত্রিপুরা পূর্ব থেকে লড়ছেন প্রজ্ঞা দেববর্মণ৷ প্রজ্ঞার সঙ্গে রাজবংশের আবেগ জড়িত থাকায় এই আসনটিতে কিছুটা এগিয়ে থেকেই শুরু করছেন তিনি৷এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী রেবতি ত্রিপুরা। পশ্চিম ত্রিপুরাতে সুবল ভৌমিকও বেশ জনপ্রিয়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী বিজেপির প্রতিমা ভৌমিক।
[ আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কাকে ‘স্কার্টওয়ালি বাঈ’ বলে কটাক্ষ, বিতর্কে বিজেপি নেতা]
কিন্তু কেন ব্যাকফুটে বিজেপি? রাজনৈতিক মহল বলছে, শরিকি কোন্দল তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ত্রিপরাল্যান্ড-সহ একাধিক ইস্যু এখন গেরুয়া শিবিরের বিপক্ষে যাচ্ছে৷ এছাড়াও সঙ্গে রয়েছে দলীয় অন্তর্কলহ৷ এলাকার উন্নয়ন নিয়েও যথেষ্ট বিরক্তির সুর স্থানীয়দের গলায়৷ রাস্তাঘাটেরও খুব একটা উন্নতি হয়নি বলেই দাবি তাঁদের৷ এছাড়াও আদিবাসীদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিও উঠেছে৷যা পূরণ হয়নি।
তার উপর আবার গেরুয়া শিবিরে ভাঙনও লেগেই রয়েছে৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের জনপ্রিয়তাও প্রায় তলানিতে ঠেকেছে৷ তাই প্রচারের ক্ষেত্রেও সেভাবে তৎপরতায় দেখায়নি রাজ্য বিজেপি৷ নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে তাই আসরে নামতে হচ্ছে মোদি-অমিত শাহর মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের৷ ইতিমধ্যেই অমিত শাহ ত্রিপুরায় জনসভা করেছেন৷ দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আবারও ৭ এপ্রিল ত্রিপুরায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও৷
[ আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী ‘জঙ্গি’, গোধরায় মুসলিম হত্যা প্রসঙ্গ তুলে মোদিকে কটাক্ষ নায়ডুর]
এদিকে আবার প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মণ সভাপতি হওয়ার পর বেশ উজ্জীবিত কংগ্রেস শিবির৷ বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চাইছে কংগ্রেস৷ ইতিমধ্যেই বহু সংখ্যক বিজেপি কর্মী সমর্থক যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে৷ বিজেপির ভাঙন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা শ্রীদাম দেববর্মা৷ তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই বহু মানুষ বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন৷ এছাড়াও আগামী ১০ এপ্রিল জোলাইবাড়িতে কমপক্ষে ৫০০০ জন আইপিএফটি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেবেন৷’’
সূত্রের খবর, বর্তমানে বিজেপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা সুদীপ রায়বর্মণ আবারও কংগ্রেসে ফিরতে পারেন৷ একসময় কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী৷ কংগ্রেস একটি সূত্রের দাবি, গোপনে দলের সঙ্গে ফের যোগাযোগ শুরু করেছেন সুদীপ রায়বর্মণ। খানিকতা স্বভাববিরুদ্ধভাবে হলেও, ত্রিপুরা নিয়ে বেশ সক্রিয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও, রাজ্য নেতৃত্বের উপর দায় চাপিয়ে বসে নেই তাঁরা ৷ ত্রিপুরায় এসে ইতিমধ্যেই জনসভা করে গিয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যে যেভাবে কংগ্রেসের উত্থান হচ্ছে ভোটাভুটির পর ত্রিপুরার সব সমীকরণ বদলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিজেপিকে পিছনে ফেলে নির্বাচনী লড়াইয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস, অন্তত এই মুহূর্তে ত্রিপুরার পরিস্থিতি তাই বলছে৷ শুধু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির আশঙ্কাই নয়৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷
The post মাত্র ১৪ মাসেই তলানিতে বিপ্লবের জনপ্রিয়তা, ত্রিপুরায় দ্রুত বাড়ছে কংগ্রেস appeared first on Sangbad Pratidin.