শেখর চন্দ্র, আসানসোল: তাঁর বান্ধবী যখন ঠোঁটে লিপস্টিক মাখেন তখন নাকি গোটা জেলা কেঁপে যায়! কিন্তু লোকসভার ময়দানে আসানসোলে পা রেখে বিহারীবাবুর ‘শক্ত ঘাঁটি’ কি টলমল করতে পারবেন ‘ললিপপ লাগি লু’র গায়ক? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন কয়লা খাদান এলাকায়। চব্বিশে শিল্পাঞ্চলের কুরসি দখলের লড়াইয়ে এবার মুখোমুখি শত্রুঘ্ন সিনহা বনাম পবন সিং।
শনিবার প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে দিল বিজেপি। বাংলার ২০ আসনের মধ্য়ে অন্যতম চমক পবন সিং। ভোজপুরী ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় গায়ক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই আসানসোল লোকসভার জন্য তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে শত্রুঘ্ন সিনহার নাম ঘোষণা করে বসে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আসানসোলের জনবিন্যাসের কথা মাথায় রেখে পবনকে প্রার্থী করল গেরুয়া শিবির।
[আরও পড়ুন: মোদি বারাণসীতেই, ভোট ঘোষণার আগেই ১৯৫ আসনের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ বিজেপির]
বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ও সাংসদ পদ ছাড়ার পর উপনির্বাচন হয় দু’বছর আগে। শত্রুঘ্ন সিনহা আসানসোল লোকসভা আসনে দাঁড়িয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তিনি বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালকে পরাজিত করেন প্রায় ৩ লক্ষ ভোটে। অথচ ২০১৪ সাল থেকে পর পর দুবার আসনটি বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় জয়ী হয়েছিলেন। প্রথমবার তিনি জয়লাভ করেছিলেন ৭০ হাজারের বেশি ভোটে দ্বিতীয়বার প্রায় ২ লক্ষ ভোটে। কিন্তু উপনির্বাচনে এসে আসনটি বিজেপি ধরে রাখতে পারেনি। এই আসনটি পুনরুদ্ধার করাই এখন বিজেপির কাছে পাখির চোখ। যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল প্রার্তী শত্রুঘ্ন সিনহা। তাঁর সাফ কথা, “কে পবন সিং? কোথায় থাকেন? আমি তো জানিই না। মানুষ মা-মাটি-মানুষের সরকারের উপর ভরসা রেখেছিল। আবারও রাখবে।”
আসানসোল লোকসভা আসনে হিন্দিবাসী ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ। তৃণমূলের তারকা প্রার্থী বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা এই এলাকায় জিতেছিলেন। হিন্দিভাষী ভোট টানতে এবার কোনও হিন্দি ভাষী প্রার্থীই দিতে চেয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে নাম গিয়েছিল আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির। কিন্তু দলের অন্দরের খবর অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে সংঘাত রয়েছে জিতেনের। দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই দ্বন্দ্ব এড়াতে বাইরে থেকেই প্রার্থী দেওয়া নিশ্চিত করেছে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে নাম উঠে আসছিল পবন সিংয়ের নাম। ভোজপুরী গায়ক-নায়ক পবন সিং শুক্রবার একটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বিজেপি সাংসদ তথা ভোজপুরি সুপারস্টার রবি কিষাণ ও ভোজপুরী স্টার নিরুহাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কী কারণে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন তা স্পষ্ট করেননি।
[আরও পড়ুন: যার জন্ম হয়নি তারও জব কার্ড! ১০০ দিনের কাজে ‘তোলাবাজ’ তৃণমূলকে তোপ মোদির]
মনে করা হচ্ছে, বিজেপি সাংসদ রবি কিষাণ এই টিকিটটি পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছেন। যদিও এই ধরনের চর্চাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ পশ্চিম বর্ধমান জেলা বিজেপি সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “দলটার নাম বিজেপি। এরকম কোনও বাংলা হিন্দি ভোজপুরী ভোটার অংক কষে প্রার্থী নির্বাচন করা হয় না। দল যাকে চাইবে তাঁকে পার্টি করা হবে।” জেলা তৃণমূল সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “শত্রুঘ্ন সিনহা আবারও বহু ভোট জয়লাভ করবেন। তাতে বাইরের থেকে যাকেই আনুক না কেন বিজেপি।”