ধীমান রায়, কাটোয়া: পেল্লাই মাপের মিষ্টি। গোল বা চ্যাপ্টা নয়। আকৃতি লম্বা। নাম রসবালিশ। এক একটার ওজন দেড় থেকে তিন কেজি। বড় মাপের একটা মিষ্টি কিনলেই পরিবারের সকলে খেতে পারবেন। এমনটাই দাবি বিক্রেতাদের। শুধু রসবালিশ নয়, বিক্রি হচ্ছে বড় মাপের রসগোল্লাও। তা কিনতে ভিড়ও হচ্ছে প্রচুর।
কিন্তু কোথায় পাওয়া যাচ্ছে এই মিষ্টি? কাটোয়া শহর থেকে কিছুটা দূরে শ্রীখণ্ডের বড়ডাঙার ঐতিহ্যবাহী নরহরি মিলনমেলার মিষ্টি দোকানে ঢুঁ মারলেই মিলবে রসবালিশ। প্রতিবছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে কাটোয়ার বড়ডাঙায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। সপ্তাহব্যাপী মেলা চলে। প্রচুর ভক্তের ভিড় হয়। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের বেশি সময় ধরে এই উৎসব চলে আসছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
এই মেলায় প্রায় ১৫টি মিষ্টির দোকান বসেছে। তার মধ্যে ৫-৬টি দোকানে বিক্রি হচ্ছে রসবালিশ। কিন্তু এই রকম নাম কেন? জানা গিয়েছে, এই মিষ্টি আসলে রসগোল্লাই। লম্বাকৃতির জন্য নাম দেওয়া হয়েছে রসবালিশ। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ৭৫০ গ্রাম থেকে শুরু করে দেড় থেকে তিন কেজি ওজনের রসবালিশ বিক্রি করছেন তাঁরা। তিন কেজি ওজনের মিষ্টির দাম ৫০০ টাকা, দেড় কেজির দাম ২৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের রসবালিশের দাম ১৫০ টাকা এবং ৭৫০ গ্রাম ওজনের মিষ্টির দাম ১০০ টাকা। এছাড়াও ৫০ টাকার এবং ২০ টাকার রসবালিশও বিক্রি হচ্ছে মেলায়।
তবে মেলার নাম নরহরি মিলনমেলা কেন? জানা যায়, ১৪৭৮ সালে শ্রীখণ্ডের বৈদ্য পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম অনুসারি নরহরি সরকার। চৈতন্যদেবের জীবদ্দশায় শ্রীখণ্ডে গৌরাঙ্গ বিগ্রহের পুজোর প্রবর্তন করেন নরহরি। বৈষ্ণব সমাজে তাঁকে এক স্বতন্ত্র ধারার প্রবর্তক বলে মানা হয়। ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন তিনি। শ্রীখণ্ডের বড়ডাঙায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর তিরোধান উপলক্ষে কার্তিক মাসের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে মিলন উৎসব ও মেলা শুরু হয়। শ্রীখণ্ডে নরহরি সরকার ঠাকুরের সাধনাস্থল থেকে গৌরাঙ্গের দারুমূর্তিকে পালকিতে চড়িয়ে বাজনা ও কীর্তন সহযোগে প্রায় দুই কিমি পথ পাড়ি দিয়ে বড়ডাঙার ভজনস্থলে আনা হয়। তার পর সেখানে নানান বৈষ্ণবীয় আচার রীতির মধ্যে দিয়ে নরহরি সরকারের তীরধান দিবস পালিত হয়।