সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে রীতিমতো চাপে গুজরাট প্রশাসন। শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, বিলকিস বানো গণধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকে বাছাই করেই কেন রেহাই দেওয়া হয়েছে জেল থেকে?
২০০২ সালের গোধরাকাণ্ড (Godhra Riots) ও তার পরবর্তী সময়ের গুজরাট হিংসায় গণধর্ষণের স্বীকার হন বিলকিস বানো। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসের গর্ভের সন্তানটিও নষ্ট হয়ে যায়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। তাঁর পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয় বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়। গত বছর ১৫ আগস্ট ওই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই প্রসঙ্গেই এদিন প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত।
[আরও পড়ুন: দিলীপকে দিল্লিতে জরুরি তলব শাহর, এবার কি মানভঞ্জনের পালা?]
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিভি নাগরত্ন ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুয়ানের বেঞ্চ এদিন প্রশ্ন তোলে, “ওই মামলায় তিন অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড লাঘব করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁদের কী করে ১৪ বছর সাজা কাটানোর পর মুক্তি দেওয়া হয়? তেমনই যদি হয়, তা হলে অন্য আসামিদের কেন রেহাই দেওয়া হল না? কেন বাছাই করে এই দোষীদেরই নির্দিষ্ট এই আইনের সুবিধা দেওয়া হল?”
গত বছর বিলকিস বানোর (Bilkis Bano) ধর্ষণকারীদের মুক্তি দেওয়া ঘিরে গোটা দেশেই প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়। বিলকিস ও তাঁর পরিবার কেন অভিযুক্তদের রেহাই দেওয়া হল এই মর্মে ফের বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালত বলেছে, “১৪ বছর পর দোষীদের রেহাই দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন যে যুক্তি দেখিয়েছে তাতে অপরাধীদের সুযোগ দেওয়া হয় নিজেদের শুধরে নেওয়ার। যাতে তাঁরা অপরাধ থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। সেই সুযোগ দেওয়া হলে তা সকলের প্রাপ্য হওয়া উচিত। কিন্তু দাগি অপরাধীদের ক্ষেত্রে তা কতটা কার্যকর হতে পারে?” গুজরাট দাঙ্গার পরপরই মামলাগুলিকে গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্রে স্থানান্তরিত করা হয় যাতে সুবিচার ও নিরপেক্ষ রায় নিশ্চিত করা যায়। যে বিচারক অভিযুক্তদের দণ্ডাদেশ দেন, তিনিও আসামিদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনের ফ্ল্যাট থেকে পরিচারিকার দেহ উদ্ধার, কীভাবে মৃত্যু, তদন্তে পুলিশ]
আদালতে গুজরাট সরকারের পক্ষ থেকে অতর্কিত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু বলেন, এ বিষয়ে সামগ্রিকভাবে কোনও মন্তব্য করা বা জবাব দেওয়া ঠিক হবে না। রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। যদিও সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা দাবি করেছেন, তাঁদের নিয়ম মেনেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ন্যূনতম ১৪ বছর তার বেশি সময় সাজা কাটানোর পর তাঁদের আচরণের ভিত্তিতে মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে সেই রেহাইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কোর্ট। বিলকিস বানোর আইনজীবী শোভা গুপ্ত (Shova Gupta) ফের দাবি করেন অন্যায় ভাবে আইনের সুবিধা নিয়ে রেহাই দেওয়া হয়েছে ওই দোষীদের। যদিও গুজরাট সরকারের তরফে গঠিত প্যানেল আগেই এ বিষয়ে মন্তব্য করেছিল ‘সংস্কারি ব্রাহ্মণ, যারা ইতিমধ্যেই ১৪ বছর সাজা ভোগ করেছে এবং জেলে যাদের আচরণ ভাল ছিল তাদের মুক্তি দেওয়া যায়।’ এরই পালটা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিলকিস, পরবর্তী শুনানি ২৪ আগস্ট।