সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডে বায়োপিকের ছড়াছড়ি। এ বছরেও বেশ কয়েকটি বায়োপিক মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন মৌলানা আজাদ। একাধারে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আজাদ। যাঁর পুরো নাম আবুল কালাম মইনুদ্দিন আহমেদ। ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রবক্তা, জাতীয়তাবাদের সমর্থক, দেশ ভাগের বিরোধী এক উজ্জ্বল আইকনিক ব্যক্তিত্ব। এবার তাঁর কাহিনিই আসতে চলেছে সেলুলয়েডে।
ছবির নাম ‘ওযো থা এক মসিহা মৌলানা আজাদ’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন ডঃ রাজেন্দ্র গুপ্ত সঞ্জয় ও সঞ্জয় সিং নেগি। রাজেন্দ্র ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত এই ছবির প্রযোজক ডঃ রাজেন্দ্র গুপ্ত সঞ্জয় স্বয়ং। ছবিতে মৌলানা আজাদের চরিত্রে রয়েছেন লিনেস ফানসে। বরোদার ব্যাচেলর অফ পারফর্মিং আর্টস কলেজ থেকে নাটকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত লিনেস দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মুম্বইতে গুজরাটি নাট্যমঞ্চের সঙ্গে জড়িত। প্রসঙ্গত যেখানে অন্যান্য বায়োপিকে বলি টাউনের নামী-দামি অভিনেতাদের দেখা গিয়েছে সেখানে মৌলানা আজাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় তথা পরিচিত লিনেসকেই বেছে নিয়েছেন নির্মাতারা। অডিশনের মাধ্যমেই চরিত্রটিকে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালে দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আজাদের জীবন ও কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বিস্তারিতভাবে বহু মানুষই জানেন না। এই বায়োপিকের মধ্যে দিয়ে মৌলানা আজাদের সেই ব্যক্তিত্বকেই ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালকদ্বয়।
১৮৮৮-র ১১ নভেম্বর মক্কায় জন্মগ্রহণ করা মৌলানা আজাদের ছোটবেলা অতিবাহিত হয়েছে কলকাতাতেই। এখানেই তিনি তাঁর দাদা ও তিন দিদির সঙ্গে থাকতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি হাতে লেখা ম্যাগাজিন ‘নয়রঙ্গ-ই-আলম’ (Nairang-e-Alam) প্রকাশ করেন। সেই সময় এটি শিক্ষিত মহলে সমাদৃত হয়েছিল। পরবর্তীতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সংকল্প নিয়ে তিনি যোগ দেন অরবিন্দ ঘোষের প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী দলে। তিনিই ছিলেন সেই দলের একমাত্র মুসলিম সদস্য। ইংরেজদের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ায় যখন ইংরেজরা তাঁর পিছনে সিআইডি নিযুক্ত করে তখন মৌলানা আজাদের পিতা তাঁকে পড়াশোনার জন্য মিশরে পাঠিয়ে দেন। পড়াশোনা শেষে কলকাতায় ফিরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ও জাতীয়তাবাদের পক্ষে কথা বলার জন্য তিনি ‘অল-হিলাল’ ও ‘অল বলাহ’ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধাচরণ করা তাঁর এই দুটি পত্রিকাকে বাজেয়াপ্ত ও বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ইংরেজরা মৌলানা আজাদকে কলকাতা থেকে সরিয়ে তাঁর রাঁচির বাড়িতে চার বছর নজরবন্দি করে রাখে। পরে মুক্ত হওয়ার পর মৌলানা আজাদ জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। ১৯২৩-এ মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি কংগ্রেসের সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হন। গান্ধীজি গ্রেপ্তার হওয়ার পরে কংগ্রেস যখন নরমপন্থী ও চরমপন্থী দু’ভাগে ভেঙে যায় তখন তাকে পুনরায় জোড়া লাগানোর কাজটি করেছিলেন মৌলানা আজাদ। স্পষ্টবাদী ও স্পষ্টবক্তা মৌলানা আজাদ আজীবন নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে সেই পরিচয় রেখেছেন। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির অন্যতম প্রবক্তা মৌলানা অাজাদ দেশ ভাগের প্রবল বিরোধী ছিলেন, দেশভাগ তাঁর কাছে ছিল নিদারুণ পরাজয়েই শামিল। সেই কারণেই গান্ধী তাঁকে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘দেশভাগের আহত নায়ক’ বলে। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হয়েই শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে শিক্ষাঙ্গনে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তিনি। যাতে দেশ পাশ্চাত্য অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে সমান তালে এগোতে পারে। তাঁর সময়েই গড়ে ওঠে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। চালু হয় প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। ১৯৫৮-র ২২ ফেব্রুয়ারি ৬৯ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন মৌলানা আজাদ।
ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ, ও গীতিকার ডঃ রাজেন্দ্র গুপ্ত সঞ্জয়। সংগীত পরিচালনায় দর্শন কাহার। সিনেমাটোগ্রাফার অজয় তাম্বত। সম্পাদনায় জেডি সিং। ১৮ জানুয়ারি সারা ভারতে মুক্তি পাবে এই ছবি। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন সিরালি (জুলেখা বেগম), সুধীর যোগলেকর, অারতি গুপ্ত, ডঃ রাজেন্দ্র সঞ্জয়, শরদ শাহ, অরবিন্দ ভেকারিয়া প্রমুখ শিল্পীরা। ছবির শুটিং হয়েছে মুম্বই, কলকাতা ও দিল্লিতে। সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছবির লেখক, প্রযোজক, পরিচালক ডঃ রাজেন্দ্র গুপ্ত সঞ্জয়, ছবির অপর পরিচালক সঞ্জয় সিং নেগি ও মুখ্য অভিনেতা লিনেস ফানসে। ছবিটি প্রসঙ্গে ডঃ রাজেন্দ্র গুপ্ত জানান “আমি স্কুলে-কলেজে পড়ার সময় থেকেই আমার বাবার থেকে মৌলানা আজাদ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আমার বাবা ছিলেন ওঁনার একজন ভক্ত। সেই থেকে আমার ভীষণ আগ্রহ জন্মায় মৌলানা আজাদ সম্পর্কে। আজকে আমরা যে সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে, চারিপাশে এমনই একটা পরিবেশ যেখানে আজ আমাদের মৌলানা আজাদের মতো মানুষের একান্ত প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।”
লিনেস ফানসের কথায় “মৌলানা আজাদের মতো ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এই সময় ছবি হওয়াটা খুব বড় বিষয়। আমি নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান বলে মনে করি যে আমি এই ছবিতে মৌলানা আজাদের চরিত্রটিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। এজন্য রাজেন্দ্রজির কাছে কৃতজ্ঞ। মৌলানা আজাদ সম্পর্কে অনেক মানুষই সেভাবে জানেন না। আমি রাজেন্দ্রজীর দেওয়ার বইপত্র ওঁনার বিষয়ে নানা লেখা পড়ে, ওনার বিভিন্ন ছবি ও কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং শুনে নিজের কল্পনাশক্তি দিয়ে চরিত্রটিকে পর্দায় যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বাকিটা দর্শকরা দেখে বলবেন যে আমি পর্দায় এই চরিত্রটিকে কতটা ফোটাতে সমর্থ হয়েছি।”
[২৬/১১-র দিন জীবন বিপন্ন করে অতিথিদের প্রাণ বাঁচিয়েছিল হোটেলকর্মীরা]