সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৪ জুন, ২০১৫। অরণ্যের সবুজ গালিচার উপর সূর্যরশ্মির জাল বিছিয়ে দিয়েছিল প্রকৃতি। মণিপুরের চান্দেল জেলার জঙ্গলাকীর্ণ রাস্তায় অত্যন্ত সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছিল সেনাবাহিনীর একটি কনভয়। এসওপি তথা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ মেনে ফৌজের রোড ক্লিয়ারিং পার্টিও যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। আচমকা গুলিবৃষ্টি শুরু হয় আশপাশের জঙ্গল থেকে। জঙ্গিদের সেই হামলায় নিহত হন ১৮ জওয়ান। প্রতিশোধ নিতে মায়ানমারে ঢুকে জঙ্গিশিবির গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনার থার্ড কোর-এর বিশেষ কমান্ডো বাহিনী টোয়েন্টি ওয়ান প্যারা স্পেশ্যাল ফোর্সেস। সেই সময়ে তৃতীয় কোরের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়াত। নিয়তির পরিহাসে মায়ানমারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো ২১ প্যারা এসএফ জওয়ানদের গুলিতেই সম্প্রতি নাগাল্যান্ডের মন জেলায় মৃত্যু হয় ১৪ নিরীহ মানুষের। আর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রাওয়াত।
[আরও পড়ুন: সেনা চপার দুর্ঘটনা LIVE UPDATE: উদ্ধার সাতজনের দেহ, হাসপাতালে বিপিন রাওয়াত]
নিজের কর্মদক্ষতা ও উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কে রাওয়াতের জ্ঞানের পরিধি ছিল অসীম। তাই মণিপুরে জঙ্গি হামলার পর দিল্লির সবুজ সংকেত মিলতেই নাগা জঙ্গিদের পালটা মার দিতে তাঁর উপরই ভরসা রাখেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিং সুহাগ। সেই সময় নাগাল্যাণ্ডের ছোট্ট পাহাড়ঘেরা শহর ডিমাপুরে সেনার ৩ কোরের দায়িত্ব ছিল রাওয়াতের কাঁধে। তাঁর নেতৃত্বেই মায়ানমারে নাগা জঙ্গিগোষ্ঠী এনএসসিএন (খাপলাং) শিবিরে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেয় ভারতীয় সেনার বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ২১ প্যারা স্পেশ্যাল ফোর্স। এদিকে, চান্দেল ফৌজের ডোগরা রেজিমেন্টের ১৮ জওয়ানকে খুন করে আত্মবিশ্বাসে ফুটছিল জঙ্গিরা। তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে মণিপুর হয়ে মায়ানমারের ভিতর প্রায় ১৫ কিলোমিটার ঢুকে খাপলাংয়ের শিবিরে হামলা চালাবে ভারতীয় ফৌজ।
গোটা অপারেশন শেষ হওয়ার পর এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী ভারতের সামরিক ইতিহাসের অন্যতম সফল অভিযানের কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করে। জানা যায়, মণিপুরের উখরুল হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে শত্রুর এলাকায় প্রবেশ করে ৭০ জনের ভারতীয় কমান্ডো বাহিনীর দু’টি দল। শত্রুর নজর এড়াতে সমস্ত রেডিও যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলেন জওয়ানরা। তারপর ৯ জুন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এনএসসিএন-এর শিবিরে হামলা শুরু করে কমান্ডো বাহিনী। শহিদ জওয়ানদের বদলা নিয়ে ওই হানায় খতম করা হয় কমপক্ষে ৩৮ জন জঙ্গিকে। খাপলাং গোষ্ঠী বুঝতে পারে এবার সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালাতে পিছপা হবে না ভারতীয় বাহিনী। আর সেই হামলার পরই শিরোনামে উঠে আসে সাহসিকতার জন্য একর পর এক পদকজয়ী বিপিন রাওয়াতের নাম। শুধু তাই নয়, ১৯৮৭ সালে অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তে চিনা ফৌজের সঙ্গে সংঘাতের সময় সেখানে মোতায়েন ছিল রাওয়াতের ব্যাটেলিয়ন।
২০১৭ সালে পুণের এক অনুষ্ঠানে মায়ানমারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে মুখ খুলে সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন কাউন্টার ইনসার্জেন্সি বিশেষজ্ঞ রাওয়াত। তিনি দাবি করেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের একটি ফোন কলের জন্য আসল পরিকল্পনায় বদল ঘটাতে হয়েছিল। তবে কর্মদক্ষতার জন্য সেনা সর্বাধিনায়ক পদে বসে শক্ত হাতে স্থলসেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে ‘ইউনিফায়েড কমান্ড’ ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডে বেশ কিছু সংস্কারও করেন। কপ্টার দুর্ঘটনায় সেই সেনা সর্বাধিনায়ক মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।