shono
Advertisement

৫০০ বছরের পুরনো রীতি, মৃত্যু ঠেকাতে জ্যান্ত ‘মরা’নিয়ে রং খেলে বীরভূমের গ্রামের বাসিন্দারা

দেবী মনসার স্বপ্নাদেশেই পালিত হয় এই রীতি।
Posted: 06:41 PM Mar 08, 2023Updated: 06:43 PM Mar 08, 2023

নন্দন দত্ত, সিউড়ি: জ্যান্ত ‘মরা’ নিয়ে দোল (Holi 2023) খেলা। এমন আজব ‘খেলা’ হল বুধবার সিউড়ির উত্তর রায়পুর গ্রামে। গ্রামের লোক একে বলে ‘ধুলোরি’। মৃত্যুর রোষ থেকে বাঁচতে তাঁরা ‘মৃতদেহ’ নিয়ে গোটা গ্রামজুড়ে হোলি খেলেন। রঙের সঙ্গে আবির, ফাগের সঙ্গে কাদা মিশিয়ে চলে খেলা। দুপুরের পরে সে খেলা শুরু হয়। চলে বিকেল পর্যন্ত। গোটা গ্রাম ঘুরে ‘মৃতদেহে’র শোভাযাত্রা শেষে গ্রামের প্রান্তে চন্দ্রভাগা নদীতে গণস্নান সেরে গ্রামে ফেরেন তাঁরা।

Advertisement

৫০০ বছর ধরে গ্রামের এটাই রীতি। দোলের দিনে গ্রামে কোনও রং খেলা হয় না। ‘ধুলোরি’ হয় দোলের পরের দিন। গ্রামের শেষে চন্দ্রভাগা নদীর পাড়ে শ্মশান থেকে মরার পরিত্যক্ত পোড়া বাঁশ, তার ব্যবহৃত বিছানা, বালিশ, কাপড়, জল দেওয়ার মাটির পাত্র নিয়ে এসে হাজির করা হয় গ্রামের মাঝে মনসা মন্দিরের সামনে। আগে নদীর ধারেই মনসা মন্দির ছিল। চক্রবর্তী পরিবারের সেই মনসার বেদি তুলে নিয়ে বর্তমানে গ্রামের মাঝখানে মন্দির করা হয়েছে। বুধবারও সেখানেই রীতি মেনে হাজির করা হয় সব।

[আরও পড়ুন: সায়গলকে প্রতি মাসে ৫ কোটি ‘প্রোটেকশন মানি’ দিতেন অনুব্রত, বিস্ফোরক তথ্য ইডির হাতে]

 

ছবি: শান্তনু দাস

বছর ২৬-এর বাবন বাগদিকে জ্যান্ত মরা সাজানো হয়। বাঁধা হয় কাঁচা বাঁশের মাচা। তার উপরে বাবনকে ‘মরা’ সাজিয়ে, তাঁর চোখ মুখে ‘ঢেকে’, খড়ের দড়ি দিয়ে তিন পাকে মাচার সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। তারপরে তাঁকে কাঁধে নিয়ে শুরু হয় ‘ধুলোরি যাত্রা’। ‘মরা’ কাঁধে রঙের উল্লাস। ‘লাশ’ কাঁধে নিয়ে চলে গ্রাম প্রদক্ষিণ। চলে জ্যান্ত মরা কাঁধে নিয়ে নাচ। সঙ্গে খোল করতাল, ঢোলের বাজনা ও হোলি খেলা। পুরুষেরা সকলেই খালি গায়ে। মেয়েরা ঝোলায় করে আবির ভরে আনে। মৃতদেহ গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তের মোড়ে মোড়ে নামানো হয়েছে। মেয়েরা মৃতদেহের মুখের কাপড় সরিয়ে তাকে আবির মাখিয়েছেন। চলেছে উল্লাস।

ছবি: শান্তনু দাস

 

[আরও পড়ুন: নারী দিবসে এয়ার ইন্ডিয়ার ৯০টি বিমানে শুধু মহিলা কর্মী, বিশেষ সম্মান মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরও]

গ্রামের বাসিন্দা বিপদতারণ চক্রবর্তী জানান, “প্রায় ৫০০ বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে। কোনও এককালে জল বসন্তে, ওলাওঠাতে গ্রাম উজাড় হয়ে গিয়েছিল। তাই গ্রামরক্ষায় জ্যান্ত ‘মরা’ সাজিয়ে মা মনসাকে তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা হয়।” গ্রামবাসীদের মতে, এটা হোলি খেলা নয়,দেবী মনসাকে তুষ্ট রাখার খেলা। কলেরা, বসন্তের জেরে এই গ্রামে আনন্দ উৎসব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শোনা কথা, পূর্বপুরুষদের দেবী মনসা স্বপ্নে মরা সাজিয়ে তাঁকে তুষ্ট করে হোলি খেলার বিধান দেন। সেই থেকেই এই রীতি চলে আসছে। সবিতা বাগদি জানান, “কাচা কাপড় পরে এদিন ধুলোরি খেলতে হবে। এটাই মায়ের শাসন। না মানলে বসন্ত হবেই হবে। ছোট থেকেই এই বিধি দেখে আসছেন।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার