অর্ণব আইচ: সাড়ে চারশো টাকা চুরির অভিযোগ তুলে গণধোলাই। অফিসের মধ্যেই সহকর্মীদের প্রচণ্ড মারে খুন হলেন এক যুবক। অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে অফিসের মালিক সুমন মণ্ডল ও দুই কর্মচারী দেবাশিস অধিকারী এবং সোমনাথ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করেছেন দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানার আধিকারিকরা।
শনিবার রাতে এম আর বাঙুর হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম অমিত চট্টোপাধ্যায়। আসলে তিনি বীরভূমের সিউড়ির চাকদহ গ্রামের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে থাকতেন দক্ষিণ কলকাতায়। রিজেন্ট পার্ক এলাকার মালঞ্চে রয়েছে একটি ফিন্যান্স সংস্থার অফিস। সেখানেই চাকরি করতেন তিনি। ওই সংস্থার মালিক হচ্ছেন সুমন মণ্ডল, যিনি বীরভূমের কীর্ণাহারের বাসিন্দা। বাকি দু’জনের মধ্যে দেবাশিসের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ ও সোমনাথ রিজেন্ট প্লেসের বাসিন্দা।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় খেলতে এসে বিপত্তি, সুন্দরী তন্বীর প্রেমে মজে প্রতারণার শিকার দিল্লির ক্রিকেটার]
শনিবার বিকেলে চারজনই অফিসে ছিলেন। দেবাশিস অধিকারী অভিযোগ তোলেন, তাঁর ব্যাগ থেকে উধাও হয়েছে সাড়ে চারশো টাকা। কোথাও টাকা না পেয়ে তিনজন মিলে অমিতের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। ধৃতদের দাবি, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তাঁদের ব্যাগ ও অফিসের ড্রয়ার থেকে টাকা চুরি গিয়েছে। তখন থেকেই তাঁরা অমিতের উপর সন্দেহ করছিলেন। তাই এদিনও অমিতের উপরই অভিযোগের আঙুল ওঠে। তাঁরা অমিতকে সাড়ে চারশো টাকা ফেরত দিতে বলেন। কিন্তু অমিত টাকা চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনজন মিলেই প্রথমে শুরু করেন বচসা। এরপরই সাড়ে চারশো টাকা ফেরত পেতে অমিতকে তাঁরা মারধর করতে শুরু করেন। তাঁর মুখ, বুক ও শরীরের অন্যান্য জায়গায় ঘুসি মারা হয়, পদাঘাত করা হয় এবং গলা, মুখে আঘাত করা হয় ধারালো ও ভোঁতা কিছু দিয়েও। মারের চোটে অজ্ঞান হয়ে যান অমিত।
শরীরে রয়েছে বহু কালশিটে ও আঘাতের চিহ্ন। ওই অবস্থায় তাঁকে সহকর্মীরাই একটি গাড়ি করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান তিনজন। খবর পেয়ে রবিবার সকালে পরিবারের লোকেরা বীরভূম থেকে কলকাতায় আসেন। তাঁরা তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করে প্রথমে সুমনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার হন আরও দু’জন। স্রেফ সাড়ে চারশো টাকার জন্য এই ‘খুন’, নাকি গণধোলাই দিয়ে খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।