নন্দন দত্ত, সিউড়ি: গ্রামের মেলার উদ্বৃত্ত টাকা থেকে আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য টেলিস্কোপ এল বীরভূমের মজিগ্রামে। শুক্রবার সন্ধের আকাশে গুনুটিয়া খামারতোরা গ্রামের মাঠ থেকে নিউটনিয়াম প্রতিফলকে টেলিস্কোপ থেকে মুক্ত আকাশ দেখল পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসী সকলেই। হয়তো এদিন থেকেই আগামীর ব্রুনোরা জোর্তিবিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহের জোগান পেল।
গত ডিসেম্বরে গ্রামের কিছু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ মিলে নিজেদের গণশ্রম দানে একটি বিজ্ঞান মেলা করেছিলেন। তিনদিন ধরে চলে মেলা। এই মেলায় উৎসব করতে খরচ হয়েছিল ৭২ হাজার টাকা। উদ্বৃত্ত ৫ হাজার টাকা। ওই টাকায় আকাশচর্চার জন্য গ্রামে একটা টেলিস্কোপ কেনার দাবি ওঠে। অতিরিক্ত টাকা লাগলে তা গ্রামবাসীরা দেবেন বলেও জানান।
[আরও পড়ুন: রসগোল্লার পর এবার জিআই স্বীকৃতির অপেক্ষায় গুপ্তিপাড়ার গুপো ও বলাগড়ের নৌকা]
তার দু’মাসের মধ্যে পাঁচ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ৯০০ এমএম ফোকাস দৈর্ঘ্যের একটা আস্ত নিউটনিক টেলিস্কোপ গ্রামে আসায় খুশির হাওয়া। যাকে ঘিরে উৎসাহের অন্ত নাই। তাই গ্রামের মুক্ত চিন্তার জন্য ১৭ ফেব্রুয়ারি দিনটিকেই বেছে নেয় মুক্তমনা মাজিগ্রাম, গুনুটিয়া খামারতোরা গ্রামের মানুষ। কারণ, এদিনই ইটালিতে বিজ্ঞানের মুক্তচিন্তার জন্য প্রকাশ্য বাজারের মধ্যে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে খুন হন জিওদার্নো ব্রুনো।
সাঁইথিয়ার পুরন্দরপুর রাজ্য সড়কের পাশ দিয়ে নেমে খামারতোরা গ্রামের মাঠে বিকাল থেকেই মাজিগ্রাম স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে গ্রামের উৎসাহীদের ভিড়। বিজ্ঞান মেলার সম্পাদক তথা শিক্ষক শুভাশিস গড়াই জানান, “শুক্রবার টেলিস্কোপ দিয়ে সকলে উজ্জ্বল লাল জ্যোর্তিবলয়ের বৃহস্পতিকে দেখলাম। যেটি আদতে একটি গ্রহ। যার ভিতর চারটে চাঁদ আছে। যে গ্রহ আমাদের মানবজীবনের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে বা ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। আকাশচর্চার প্রথম পাঠে তেমন আকাশ দেখে আমরা আনন্দিত।” বিজ্ঞান মেলার যুগ্ম সম্পাদক উত্তম দাস জানান, “আমরা সকলে মিলে একটা বিজ্ঞান মেলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মেলা যে একটা স্বাধীন মুক্তমনের গ্রাম গড়ে তুলতে আমাদেরই প্রেরণা দেবে এটা ভাবিনি। আমাদের আশা মাজিগ্রাম, খামাতোরা একদিন স্বাধীন বিজ্ঞানমনস্ক গ্রামের মডেল হয়ে উঠবে।”