স্টাফ রিপোর্টার: কেশব ভবনে আরএসএসের বৈঠকে না ডাকাই শুধু নয়, বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা পোর্টের গেস্ট হাউসে তলব করে শুভেন্দু অধিকারীকে (Subhendu Adhikari) কার্যত সমঝে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ (BL Santosh)।
দলীয় সূত্রে খবর, প্রকাশ্য সভা মঞ্চে দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ, দলের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনোভাব, পরিষদীয় দলকে নিয়ে সমান্তরালভাবে পার্টি চালানোর চেষ্টা এবং দিলীপ-সুকান্তর সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলার পাশাপাশি ডিসেম্বর তত্ত্ব নিয়ে দলের কর্মীদের বিভ্রান্ত করা। দলে শুভেন্দুর এই ধরনের একাধিক কার্যকলাপে শুধু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই নয়, আরএসএসও চরম ক্ষুব্ধ। আর তাই এদিন রাতে শুভেন্দুকে তলব করে বি এল সন্তোষ-সহ বিজেপি ও আরএসএসের শীর্ষনেতৃত্ব কড়া বার্তা দিয়েছে বলেই খবর। পোর্ট গেস্ট হাউসের বৈঠকে দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। এদিন কেশব ভবনে সংঘের সমন্বয় বৈঠকে না ডাকা হলেও সেখানে শুভেন্দুকে কার্যত তুলোধোনা করা হয়। দিলীপ-সুকান্তরাও (Sukanta Majumdar) শুভেন্দুর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: রাতের আকাশে সফল উৎক্ষেপণ অগ্নি-৫-এর, আঘাত হানবে বেজিংয়েও!]
তারিখ রাজনীতি এবং মর্নিং ওয়াক নিয়ে দিলীপকে (Dilip Ghosh) আক্রমণের পর দলের মধ্যেই কোণঠাসা শুভেন্দু। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে বৃহস্পতিবার সকালেই অবশ্য ভোলবদল করেন বিরোধী দলনেতা। আরএসএস (RSS) ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে কার্যত ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে শুভেন্দু স্বীকার করতে বাধ্য হলেন দিলীপ ঘোষ তাঁর নেতা। শুভেন্দু বলেন, “দিলীপ ঘোষ ইজ মাই লিডার। উনি দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। ওঁর নেতৃত্বেই আমি বিজেপিতে (BJP) যোগ দিয়েছিলাম।’’ যদিও এদিন সকালেও অবশ্য সেই মর্নিং ওয়াকে গিয়ে তারিখ রাজনীতি নিয়ে ফের শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। দিলীপ বলেন, ‘‘তারিখ পে তারিখ। আমি কোনও তারিখের রাজনীতি করি না। কারণ, আমার মতে শুধু ভোটটা তারিখ মিলিয়ে হয়।’’ শুধু তাই নয়, আসানসোলের ঘটনাতেও বিরোধী দলনেতাকে নিশানা করেছেন দিলীপ।
এ প্রসঙ্গে পরে জিজ্ঞেস করা হলে সুর নরম ছিল বিরোধী দলনেতার। ভোল বদলে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘দিলীপদা আমাদের পার্টির নেতা। তার মন্তব্যের উপরে আরেকটা মন্তব্য আমি কেন করতে যাব।’’ এরপর চাপে পড়ে ফের শুভেন্দুর সাফাই, ‘‘আপনারা সেদিন হাজরা মোড়ের সভা নিয়েও বলেছেন। আমাদের কোনও নেতার বিরুদ্ধে আমার কোনও বক্তব্য নেই। ভবিষ্যতেও করব না।’’ এদিকে, বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, শুভেন্দু ও দিলীপ ঘোষের কোন্দল মেটাতেই এদিন আসরে নামতে হয়েছে বি এল সন্তোষকে (BL Santosh)। দিলীপ-সুকান্ত-শুভেন্দুকে নিয়ে রাতের বৈঠকে তিন নেতার মধ্যে ফাটল মেরামতির চেষ্টা করেছেন তিনি। তার আগে সকালে কেশব ভবনের বৈঠকে বিজেপি নেতাদের মধ্যে সমন্বয় রাখার বার্তা দিয়েছে আরএসএসের শীর্ষনেতৃত্ব। সুকান্ত-দিলীপ-অমিতাভদের সমন্বয়ের পাঠ দিয়েছে আরএসএস (RSS)। এদিন কেশব ভবনে সংঘের সমন্বয় বৈঠকে সুকান্ত-দিলীপ-অমিতাভদের পাশাপাশি সন্তোষ, সুনীল বনশল, সতীশ ধনদরা যেমন ছিলেন। তেমনই দীর্ঘ সময় পর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল অরবিন্দ মেননের। সংঘের তরফে ছিলেন শীর্ষনেতা অরুণ কুমার। এদিকে, বুধবার রাতে আবার সংঘের শীর্ষনেতা অরুণ কুমারও শুভেন্দুকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বলে খবর। আবার শুভেন্দুর জন্মদিন উপলক্ষে এদিন সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন দিলীপ।
[আরও পড়ুন: ‘চাই আর্জেন্টিনা জিতুক, কিন্তু মনে হয় ফ্রান্স জিতবে’, বিশ্বকাপ নিয়ে মন্তব্য তসলিমার]
বিএল সন্তোষ শুভেন্দুকে সমঝে দেওয়ার পর সুর নরম করেছেন দিলীপ ঘোষও। শুক্রবার সকালে মর্নিং ওয়াকে গিয়ে দিলীপবাবু বলেন, “আপনারা আপনাদের প্রয়োজন মতো এই তরজা বাড়ান কমান। আমরা একই পার্টি। একই আদর্শ। নিজের কথা যে যার নিজের মতো বলেন। এটাই গণতন্ত্র। যা বিজেপি দলে আছে। বোধোদয় না, এটাই বাস্তব। কাল ওনার জন্মদিন ছিল। বি এল সন্তোষ কাল কো-অর্ডিনেশন করেছেন। মধ্যস্থতা বলা ঠিক হবে না।”