রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: উপলক্ষ্য ছিল বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta Majumdar) সংবর্ধনা সভা। সল্টলেকের ইজেডসিসিতে সেই অনুষ্ঠান মূলত পরিণত হল একুশের বিধানসভায় বিজেপির হারের অন্তর্তদন্তের মঞ্চ। আর সেখানেই বিজেপির সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি স্বীকার করে নিলেন, রাজ্যের মানুষকে তাঁরা বিশ্বাস করাতে পারেননি যে, বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে পারে। শুভেন্দু অধিকারী আবার স্বীকার করলেন, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাই তাঁদের জয়ের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার ইজেডসিসিতে নতুন রাজ্য সভাপতিকে সংবর্ধনা দেওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা (Rahul Sinha), অসীম ঘোষের মতো প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিরা। উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও (Suvendu Adhikari)। নতুন রাজ্য সভাপতির উদ্দেশে প্রাক্তনদের পরামর্শ, গোষ্ঠী ভুলে খোলা মনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। রাহুল সিনহা বললেন, শুধু মুখে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথা বললে হবে না। কাজের ক্ষেত্রেও সেটা করে দেখাতে হবে। নতুন-পুরনো সবাইকে খোলা মনে সঙ্গে নিতে হবে। আরেক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অসীম ঘোষ বলেন, দলের জেলাস্তরে অনেক পুরনো নেতা আছেন, যারা হয়তো এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। তাঁদের মূলধারার সংগঠনে জায়গা দিতে হবে, মিটিং-মিছিলে ডাকতে হবে।
[আরও পড়ুন: গোয়ার পর এবার ‘মিশন মেঘালয়’, তৃণমূলের পথে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী-সহ ১৩ কংগ্রেস বিধায়ক!]
এরপরই দিলীপ ঘোষ বিস্ফোরক স্বীকারোক্তিটি করেন। তিনি বলেন,”আমরা রাজ্যবাসীকে বিশ্বাসই করাতে পারিনি যে আমরা রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে পারি। রাজ্যের মানুষ ভেবেছে বিজেপি ১৫০ আসন পাবে না। ওঁরা ১০০ আসন পাওয়ার মতো দল। তাই আমাদের সরকারে আনেনি। বিরোধী আসনে বসিয়েছে। বিরোধী আসনে থেকেও মানুষের কাজ করা যায়। আমাদের এখন সেটাই করতে হবে।” শুভেন্দু অধিকারীও ওই সভায় চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে তেড়েফুঁড়ে প্রচার করা সত্ত্বেও বিজেপি (BJP) পিছিয়ে পড়ছে একটাই কারণে। সেটা হল বুথস্তরের সংগঠন। রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে হলে বুথস্তরের সংগঠন নিয়ে কাজ করতে হবে। হয়তো ১২ হাজার বুথে সেভাবে সংগঠন শক্ত করার সম্ভব নয়। কিন্তু বাকি বুথগুলিতে সংগঠনের কাজ করতে হবে।
[আরও পড়ুন: ফের বাধা! একাধিক যুক্তি দেখিয়ে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে আপত্তি ডিলারদের সর্বভারতীয় সংগঠনের]
উল্লেখ্য, সল্টলেকের সভার আগে এদিন দুপুরে বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে দলত্যাগ নিয়ে বিধায়কদের কড়া বার্তা দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধায়কপদ থেকে পদত্যাগ না করে দল ছাড়লে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে পরিষদীয় দলের সঙ্গে বৈঠকে সাফ জানান বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিধায়করা দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিলে দলত্যাগ আইন নিয়ে পড়তে হবে। পরিষদীয় দলের বৈঠকে স্পষ্ট করে দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, বৈঠকে আক্রমণাত্মক ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি সাফ জানান, অনেকে দল ছেড়েছেন। তাঁদের সদস্যপদ খারিজের দাবিতে আদালতে মামলা চলছে। ৭ অক্টোবর দলত্যাগীদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে। মুকুল রায়কে দিয়ে এই কাজ শুরু হবে। দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে সিপিএম, কংগ্রেস যা পারেনি, তিনি তা করে দেখাবেন বলে জানান।