রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বঙ্গ সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সন্দেশখালি ইস্যুতে শুভেন্দু অধিকারীর ‘খলিস্তানি’ মন্তব্যের জেরে চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির পালটা চাপে পড়ে যাওয়ার জেরে বিতর্ক এড়াতে এই পরিস্থিতিতে শাহর না আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে দলের একাংশ। যদিও বিজেপির তরফে দাবি, ৬ মার্চ মোদি আসছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী আসার কয়েকদিন আগে আর অমিত শাহ(Amit Shah) আসবেন না। সন্দেশখালি ইস্যুতে তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি মঙ্গলবার সন্দেশখালি গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে বিজেপি। শুভেন্দু নিজেও ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছেন।
সূত্রের খবর, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে যে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে তা মেনে নিতে পারছে না গেরুয়া শিবিরের বড় অংশই। যেভাবে শিখ সম্প্রদায় গর্জে উঠেছে তাতে অস্বস্তিতে দিল্লির নেতারাও। এই ‘খালিস্তানী’ মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পাশাপাশি শুভেন্দুর পাশে থাকার বার্তাও দেননি সুকান্ত। বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই নীরবতাই বুঝিয়ে দিচ্ছে বিরোধী দলনেতার এইধরণের মন্তব্য দল সমর্ন করছে না। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে কর্তব্যরত শিখ পুলিশ আধিকারীক যশপ্রীত সিংকে ‘খলিস্তানি’ বলে অপমান করেছেন শুভেন্দু। প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছে শিখ সম্প্রদায়। শুভেন্দুর এই মন্তব্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে দেশ। এটা নিয়ে বিজেপি ব্যাকফুটে।
[আরও পড়ুন: ‘হাত বেঁধেছে আদালত, নইলে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারে রাজ্য পুলিশই’, দাবি অভিষেকের]
শাহর সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও আগামী ৬ মার্চ রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৭ মার্চ আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু তার আগের দিনই রাজ্যে আসছেন তিনি। ফলে ৬ মার্চই বারাসতে মহিলাদের সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। মহিলা ন্যায় সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। সন্দেশখালি ঘটনার জেরেই বারাসতে মোদি মহিলাদের সমাবেশে থাকবেন বলেই বিজেপি সূত্রে খবর। সন্দেশখালির ঘটনাকে হাতিয়ার করে ভোটের আগে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে মাঠে নেমে পড়েছিল গেরুয়া শিবির। তখন তাদের তোলা একাধিক অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এবং শুভেন্দুর বিতর্কিত মন্তব্যে উলটে বিজেপিই চাপে পড়ে গিয়েছে। বিজেপি মনে করছে সন্দেশখালির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এই সভা হলে ভোটের মুখে হতাশ বিজেপি কর্মীদের অক্সিজেন দিতে সাহায্য করবে।
তাই মোদিকে বারাসতে সভা করিয়ে পালে হাওয়া তুলতে চাইছে বিজেপি। একইসঙ্গে লক্ষ্য, ধর্মীয় মেরুকরণের অস্ত্রে আরও বেশি করে শান দেওয়া। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ৬ মার্চ রাজে্য এলে তার ঠিক কয়েকদিন আগে অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় আসার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। বিজেপি সূত্রে খবর, সম্ভবত ২৮ ফেব্রুয়ারি অমিত শাহর সফর বাতিল হচ্ছে। কিন্তু দলের একাংশ মনে করছে, শুভেন্দুর ‘খালিস্তানি’ মন্তব্যের জেরে বিজেপির বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ সারা দেশের পাশাপাশি কলকাতাতেও দানা বেঁধেছে সে কারণেই শাহর কলকাতায় আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে টানা বিক্ষোভ চালাচ্ছে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন।
শুভেন্দু অধিকারীর গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার কলকাতায় এলে বিক্ষোভের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেই শাহর আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে খবর। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তারপর অমিত শাহ আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আগাামী সপ্তাহে মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরে যাওয়ার কথা রয়েছে শাহর। সেখানেই কর্মিসভা করার কথা। বিজেপির তরফে এখনও অবশ্য অমিত শাহর সফর বাতিলের বিষয়টি অফিসিয়ালি জানানো হয়নি।