বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: একদিকে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ধারাবাহিক আন্দোলন। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের জমির পাট্টা ও চা সুন্দরী প্রকল্পের ম্যাজিক। দুইয়ের সাড়াশি আক্রমণে গেরুয়া শিবির এমনিতেই উত্তরের চা বলয়ে ছন্নছাড়া দিশাহারা। তার উপর ১ মার্চ তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন সংকোশ থেকে এলেনবাড়ি পর্যন্ত পদযাত্রা করে প্রচারে নামলে তাদের সাংগঠনিক পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় এখন সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। সাংসদ, বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও দুর্দশা এতটাই যে ভোটের মুখে ইস্যু খুঁজে পালটা আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারছে না অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত বিজেপি। স্বভাবতই নিচুতলার কর্মী মহলে শঙ্কা বেড়েছে তবে কি এবার রণে ভঙ্গ দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে! যদিও দলের জেলা নেতৃত্ব সাংগঠনিক বেহাল দশার অভিযোগ মানতে নারাজ।
চা বলয়ে ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূলের কাছে ছিল ‘অ্যাসিড টেস্ট’। সেখানে অভাবনীয় সাফল্য মিলতে অনেকদিন আগেই শাসকদলের ‘পাখির চোখ’ হয়েছিল ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। ঘর গোছাতে দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলনের পাশাপাশি উন্নয়নের কাজ চলেছে। রাজ্যের আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়, অনগ্রসর ও আদিবাসী শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক এবং আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায় মাটি কামড়ে পড়ে থেকে একের পর এক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেও গেরুয়া শিবিরে পালটা কর্মসূচির কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। এমনকী, চা শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা করানোর দাবিতে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের পাচদিনের পদযাত্রার পরও নীরব দেখা গিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। অথচ চা-বলয়ে যে আটটি বিধানসভা এলাকা রয়েছে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে সাতটি দখলে নেয় বিজেপি। আলিপুরদুয়ার জেলার পাঁচটি আসনের একটিও তৃণমূল ঘরে তুলতে পারেনি। পরে অবশ্য আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। এর আগে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার আসন বিজেপি দখল করে। কিন্তু ভোটের ফলাফলের নিরিখে পদ্ম শিবির এতো শক্তিশালী হয়েও কেন আন্দোলনে পাল্লা দিতে পারছে না শাসকদলের সঙ্গে?
[আরও পড়ুন: সহবাসের পর বিয়েতে ‘না’, প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আত্মহত্যার চেষ্টা তরুণীর]
রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে তৃণমূল নেতৃত্ব সঠিকভাবেই উপলব্ধি করেন চা বলয়কে উপেক্ষা করে আলিপুরদুয়ার জেলা এবং জলপাইগুড়ির মালবাজার মহকুমা ও ধূপগুড়ি ব্লক এলাকায় নির্বাচনে ভালো ফলাফল সম্ভব নয়। এখানে রয়েছে ১৪৫টি চা বাগান অধ্যুষিত আটটি বিধানসভা এলাকা। এর পরই সুপরিকল্পিতভাবে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে তৃণমূল। পুরোপুরি বামেদের ধাঁচে জলপাইগুড়ি জেলার ৭৮টি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার ৬৭টি চা বাগানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে চা বলয়ের ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে ওই ইউনিট কমিটিগুলো সক্রিয় ভূমিকা নিতে গেরুয়া ভোটব্যাঙ্ক ফাঁকা হয়। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ অস্বীকার করেননি আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল নেতা মৃদুল গোস্বামী। পাশাপাশি তিনি বলেন, “চা শ্রমিকরা জমির পাট্টা পেয়েছে। চা সুন্দরী প্রকল্পে পাকা বাড়ি হয়েছে। বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আদায়ের জন্য লড়াই চলছে। তাই শ্রমিকরা বিজেপির সঙ্গে নেই।” তৃণমূল প্রভাবিত তরাই-ডুয়ার্স টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন সরকার দাবি করেন, “এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি অনিবার্য।” যদিও বীরপাড়া-মাদারিহাটের বিধায়ক তথা বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মনোজ টিগগা বলেন, “বিজেপি লোক দেখানো আন্দোলনে নেই। আমাদের সংগঠন যে যথেষ্ট মজবুত আছে লোকসভার ফলাফলে স্পষ্ট হবে।”