রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: জেলায় জেলায় অযোগ্য ও কাছের লোকেদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে পুরনো ও যোগ্যদের। বঙ্গ বিজেপির (BJP) ক্ষমতাসীন শিবিরের কিছু নেতার বিরুদ্ধে ওঠা এই স্বজনপোষণের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চায় দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব। বাদ পড়া যোগ্য পুরনো নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের কথা শুনে তাদের মান ভাঙাতে উদ্যোগী কেন্দ্রীয় নেতারা।
সূত্রের খবর, একেবারে বুথস্তরে গিয়ে এই কাজ করবেন বঙ্গ বিজেপির নয়া কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল ও দলের নয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্দ। সংগঠনের দুর্বলতার গোড়ায় গলদ ও বসে যাওয়া নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের কারণ খুঁজতে নবান্ন অভিযানের পরই জেলা সফর শুরু করবেন সুনীল বনসল ও সতীশ ধন্দরা। জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সংগঠনের হালহকিকৎ নিয়ে তাঁরা সরাসরি রিপোর্ট দেবেন সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে।
এদিকে, তার আগেই অবশ্য দলের ৪২টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করে সতীশ বুঝিয়ে দিয়েছেন কড়া হাতেই ধরবেন সংগঠনের রাশ। জেলা সভাপতিদের নিয়ে সেই বৈঠকে সতীশ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আট-দশমাস জেলা সভাপতির দায়িত্বে থাকা হয়ে গিয়েছে। এবার কাজ দেখাতে হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম-সহ একাধিক জেলায় দলের কয়েকটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের কাজে যে তিনি খুশি নন, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ওই বৈঠকে। সংগঠনের অগ্রগতি নিয়ে একাধিক জেলা সভাপতির ভূমিকায় তিনি অসন্তুষ্ট।
[আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে অভিষেক, তিন জেলার শ্রমিক সম্মেলনে দেবেন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা]
দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিকে তিনি বৈঠকে জিজ্ঞেস করেন, ক’টা শক্তিকেন্দ্র গঠন হয়েছে? জেলা সভাপতি বলেন, আগের কমিটি অসহযোগিতা করছে। তাঁকে তখন সতীশ বলেন, ১৭ দিন আগেও আপনি একই কথা বলেছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযান কর্মসূচি শেষ হলেই বিভিন্ন জেলায় যাবেন সুনীল বনসল। দলের সব পক্ষের সঙ্গেই কথা বলবেন তিনি। পাশাপাশি সতীশ ধন্দও হাওড়া, হুগলি ও মেদিনীপুর জোনের একাধিক জেলায় সফর করবেন। তমলুক, কাঁথি ইত্যাদি সাংগঠনিক জেলাতেও সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে একাধিক ক্ষোভ রয়েছে। সেখানেও যাবেন তিনি।
সূত্রের খবর, সুযোগ পেলে এই দুই কেন্দ্রীয় নেতার সামনে দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে চান পুরনো কর্মীরা। বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে সামসুর রহমানের বক্তব্য, ‘‘আমরা লিখিত আকারে এই দুই শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সব বিষয় জানাব।’’ কাছের লোকদের পদে বসানো হয়েছে বলে সুকান্ত-অমিতাভদের নিশানা করে এটা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee) থেকে দিলীপ ঘোষরা।
এদিকে, নবান্ন অভিযানের হাওয়া তুলতে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের পাশাপাশি দিলীপ ঘোষও জেলায় জেলায় প্রস্তুতি সভায় যাচ্ছেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির ফেসবুক পেজে নবান্ন অভিযান সফল করতে যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে তাতে সুকান্ত-শুভেন্দুর ছবি থাকলেও দিলীপ ঘোষের ছবি নেই। যা নিয়ে দলের মধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষকে সফলতম সভাপতি বলা হয়ে থাকে। দলের একাংশের দাবি, বাংলায় বিজেপি কর্মীদের কাছে দিলীপ ঘোষের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। তাহলে নবান্ন কর্মসূচির ছবি থেকে দিলীপ বাদ কেন? এ থেকে প্রশ্ন, নবান্ন অভিযানকে সামনে রেখেও কি গোষ্ঠীকোন্দল অব্যাহত।
এদিকে, বঙ্গ বিজেপিকে শক্তিশালী করতে হলে অন্য দল থেকে নেতা-কর্মী আনতে হবে বলে সেই পুরনো কৌশলেই সায় দিয়েছেন দলের নয়া পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। একুশের ভোটের আগে এই দলবদলের খেলা বুমেরাং হয়েছিল বিজেপির কাছে। বনসলের বার্তার পর দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বলছেন, “ঝাঁকে ঝাঁকে তৃণমূল নেতারা আসবেন।” আবার সুকান্ত বলছেন, “কর্মীদের জন্য দরজা খোলা।”