রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রাজ্য প্রধান বিরোধী হতে পেরেই সাফল্য দেখছে বিজেপি (BJP)। মঙ্গলবার রাজ্য কার্যকারিনী বৈঠকে বিধানসভা ভোটে (WB Assembly Election 2021) দলের পর্যদুস্ত হওয়ার পর তার কারণ অনুসন্ধানে পর্যালোচনা কিছুই হল না। উলটে মাত্র ৩টি আসন থেকে বিধানসভায় ৭৭ আসন পাওয়াটা যে বড় সাফল্য সেটাকেই বারবার তুলে ধরা হল। এদিকে দলে গুরুত্ব বাড়ল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
প্রথমে বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তারপর বৈঠকের সমাপ্তি ভাষণেও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ভাষণেও উঠে এল না হারের পর্যালোচনা বা ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কী করা উচিৎ। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির কার্যকারিণী বৈঠকে জেপি নাড্ডার বক্তব্য, “২০১৬–তে দলের ৩ জন বিধায়ক ছিল। ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এবার ২০২১–এ ৩৮.১ শতাংশ ভোট এসেছে। ২ কোটি ২৭ লক্ষ মানুষ ভোট দিয়েছে। ৩ থেকে বেড়ে আসন সংখ্যা ৭৭ হয়েছে। অল্প সময়ে বিজেপি লম্বা সফর শেষ করেছে। কংগ্রেস–সিপিএম শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের সামনে শুধু তৃণমূল রয়েছে লড়াইয়ের ময়দানে।” এ প্রসঙ্গেই নাড্ডা আশাবাদী, এইভাবে এগোলে আগামী পাঁচ বছর পর বিজেপি বাংলায় সরকার গড়বে। ৭৭ থেকে ২০০ আসন পার করবে।
[আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের পাশে রাজ্য, জাতীয়স্তরের পরীক্ষার কোচিং ফি-ও মেটানো যাবে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে]
দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও এদিন হেস্টিংস কার্যালয়ে বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “৭৭ জন বিধায়ক নিয়ে বিজেপি বিধানসভায় গিয়েছে। এত শক্তি নিয়ে কোনও বিরোধী পার্টি প্রবেশ করতে পারেনি। দু’শোটি আসন টার্গেট ছিল। অর্ধেকে পৌঁছেছি। মানুষ সরকারে চায়নি। দায়িত্বশীল বিরোধী হিসাবেই দেখতে চেয়েছে আমাদের।” এদিন দলের কার্যকারিনী বৈঠকের রাজনৈতিক প্রস্তাবেও ভোটে বিপর্যয়ের কারণ বিশ্লেষনে কিছু লেখা হয়নি। শুধুমাত্র বলা হয়েছে, লোকসভায় ১২১টি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেই তুলনায় বিধানসভার ফলাফল আশাহত। রাজনৈতিক প্রস্তাবেও বলা হয়েছে, ৩ থেকে আসন সংখ্যা ৭৭ হওয়াটা অভাবনীয় সাফল্য। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, এটাও আশার।
রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন, যে দল বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা দখলে আত্মবিশ্বাসী ছিল পরাজয়ের কারণ না খুঁজে বৈঠকে শুধু প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সাফল্যের কথাই বলা হচ্ছে। এদিন দলীয় বৈঠকে অবশ্য নিজের বক্তব্যে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেছেন, ভোটের ফলাফল নিয়ে প্রতি বিধানসভাভিত্তিক পর্যালোচনা হওয়া দরকার। সেখানে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক, রাজ্য পর্যবেক্ষক, প্রার্থী ও জেলা নেতাদেরও থাকা দরকার। এছাড়া, প্রতি নেতাকে নিজের বুথে সপ্তাহে একদিন জনসংযোগে সময় দিতে হবে। এই দু’টি প্রস্তাব রেখেছেন বিরোধী দলনেতা।
[আরও পড়ুন: কলকাতা পুরসভার ক্যাম্পে টিকা বিভ্রাট! মিলছে না ভ্যাকসিন গ্রাহকদের হিসেব]
আবার বৈঠকে উপস্থিত রাজ্য বিজেপির সহ–পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন একটি গল্প শোনান, তিনি বলেন, এক রাজার ইচ্ছা হয়েছিল দেশের লোক কেমন হবে তা দেখবেন। পুজো হবে। সবাই ড্রামে এক ঘটি করে দুধ ঢালবে। ড্রাম খুলতে দেখা গেল ড্রাম ভরতি জল। রাজ্য বিজেপির ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। দলের একাংশ মনে করছে, এই গল্প বলে ভোটে বিপর্যয় নিয়ে কার্যত রাজ্য নেতাদের দিকেই দায় ঠেলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। এর প্রতিবাদ করেছেন রাজ্য বিজেপির একাংশ।