সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি বরাবরই কৌশলী, বঙ্গ রাজনীতির ‘চাণক্য’। দীর্ঘদিন পর সক্রিয় রাজনীতিতে এসেও তারই প্রতিফলন ঘটালেন।শপথ গ্রহণের দিন মুকুল রায়ের (Mukul Roy) আচরণ বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। শুক্রবার তিনি নির্ধারিত সময়েই পৌঁছে যান বিধানসভায়। ঠিক ১০ মিনিট সেখানে ছিলেন। শপথগ্রহণের পর বিজেপি (BJP) পরিষদীয় দলের ঘরে না গিয়ে সোজা তৃণমূল পরিষদীয় দলের ঘরের দিকে চলে যান তিনি। সেখানে দেখা করলেন শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে, চলল সৌজন্য বিনিময়ও। তারপরই অবশ্য মুখে কুলুপ আঁটলেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক। বললেন, ”মানুষের জীবনে এমন দু-একটা দিন আসে, যখন মানুষকে চুপ থাকতে হয়।” এই কথাই বহুমুখী ইঙ্গিতবাহী।
প্রায় ২০ বছর পর নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিলেন মুকুল রায়। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি অনেক কম প্রচার করেও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বেশ বড় ব্যবধানেই জিতেছেন। আসলে মুকুল রায় এমন এক ব্যক্তি, যাঁর নামেই জনতার বিপুল আগ্রহ। ফলে একুশে প্রবল বিজেপি হাওয়ার মাঝে তাঁর জয় বিশেষ কোনও ব্যাপার নয়। তবে জয়ের পর বিধায়কের শপথ নিতে এসে মুকুলের আচরণ কিন্তু উসকে দিয়েছে একাধিক জল্পনা। এদিন বিধানসভা কক্ষে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান প্রোটেম স্পিকার তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তারপরই মুকুল রায়কে ঘিরে ধ্বনি ওঠে, দলনেতা হতে হবে। এসবে বিশেষ কর্ণপাত না করে তিনি তৃণমূল (TMC) পরিষদীয় দলের ঘরে যান। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন, অন্যদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে যান। একটিবারও ঢোকেননি তাঁর নিজের দল বিজেপি পরিষদীয় দলের ঘরে। এমনকী পরিষদীয় দলের বৈঠকও এড়িয়ে গিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাই কোর্টের]
এরপর মুকুল রায় বিধানসভার বাইরে এলে তাঁকে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করেন। তাতে প্রথমে মুকুল রায় জবাব দেন, ”মানুষের জীবনে এমন দু-একটা দিন আসে, যখন মানুষকে চুপ থাকতে হয়।” এ নিয়ে জল্পনা উসকে ওঠে। এই নীরবতার কী অর্থ। বিজেপি বিধায়ক হিসেবে শপথ নিয়েই তৃণমূল পরিষদীয় দলের ঘরে কেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ”সুব্রত বক্সির সঙ্গে দেখা হয়েছে। আরও অনেকের সঙ্গেই হয়েছে। সুব্রত মুখার্জিকে দেখিনি।” কিন্তু সকলে যে তাঁকেই বিরোধী দলনেতা হওয়ার দাবি তুললেন? এ নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করেননি মুকুল। এমনিতেই এই পদ নিযে মুকুল-শুভেন্দুর একটা অলিখিত লড়াই আছে, যে লড়াইয়ে অনেকেই শুভেন্দুকে এগিয়ে রাখছেন। কারণ, হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর নজরকাড়া সাফল্য। তবে কি এই দৌড়ে খানিক পিছিয়ে থেকেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন একদা তৃণমূলের ভরসাযোগ্য নেতা মুকুল রায়? তাঁর আজকের আচরণ তুলে দিচ্ছে এমনই বেশ কিছু প্রশ্ন।
[আরও পড়ুন: ফিরল রেড রোডের স্মৃতি, কলকাতায় গাড়ির বেপরোয়া গতির বলি ১]
এদিন বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্পিকার নির্বাচনে অংশ নেবেন না দলের বিধায়করা। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ”যতদিন হিংসা বন্ধ না হবে ততদিন বিধানসভায় আসবে না বিজেপি।” আগামী সোমবার বেলা ১১টায় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ। তারপর ৩ টে নাগাদ ক্যাবিনেট বৈঠক।