স্টাফ রিপোর্টার: আরএসএস ও বিজেপি নেতৃত্বের ফের টার্গেট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রতিবাদী পশ্চিমবঙ্গ। লক্ষ্য একটাই, যে কোনও মূল্যে বাংলাকে দুর্বল করা। আর তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের বাংলা ভাগের ছক কষা শুরু করে দিল বিজেপি (BJP)। বস্তুত সেই কারণে সংসদীয় নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গকে পৃথক করার জিগির তুলে রাজ্য ভাঙার পুরনো ফর্মুলা নিয়ে ইতিমধ্যে মাঠে নামার প্রস্তুতিও শুরু করেছে আরএসএস। কট্টর হিন্দুত্ববাদী আরএসএস নেতা আর জগন্নাথ সম্পাদিত পত্রিকা ‘স্বরাজ্য’-এ পশ্চিমবঙ্গকে দুর্বল করার লক্ষ্যে রাজ্যকে দু’টুকরো করার ব্লু-প্রিন্ট প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংঘ-ঘনিষ্ঠ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে আছেন প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তও।
এখনই ভোট হলে পশ্চিমবঙ্গে যে দু-তিনটির বেশি লোকসভা আসনে দাগ কাটতে পারবে না পদ্মশিবির, তা পার্টির তাত্ত্বিক নেতাদের গোপন রিপোর্টেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে আরএসএস (RSS) দেশের বড় রাজ্য ভেঙে ৫২টি রাজ্য তৈরির যে পরিকল্পনা আগেই করেছে, তারই পরবর্তী ধাপ হিসাবে বাংলাকে দু’টুকরো করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে টিম-মোদির প্রথম ও প্রধান টার্গেট দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পশ্চিমবঙ্গ। কারণ, কেন্দ্রের জনবিরোধী সিদ্ধান্ত হলেই গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে প্রথম গর্জে ওঠেন তৃণমূলনেত্রী। তাই পশ্চিমবঙ্গকে দু’টুকরো করে উত্তরবঙ্গকে প্রথমে লাদাখ বা কাশ্মীরের ধাঁচে কেন্দ্রের শাসনাধীনে নিয়ে আসার ছক তৈরি করছে আরএসএস।
[আরও পড়ুন: ভাতারের স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক ও ভূগোলের শিক্ষিকার ভিডিও ভাইরাল! উঠছে সাসপেন্ডের দাবি]
আসলে ছোট ছোট রাজ্যগুলি যত দুর্বল হবে, ততই কেন্দ্র-নির্ভরতা বাড়বে। আর তা হলে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবে না। যদিও সিএএ এবং নাগরিকত্ব আইন রাজ্যে আটকে দেওয়া মমতার বাংলায় আদৌ এই ‘বাংলা ভাগ’ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ২০২১-এ মোদি-শাহ জুটি দলের সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েও পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ক্ষমতা দখল দূরের কথা, উলটে গেরুয়া আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় আগের চেয়ে তৃণমূলের আসন বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু তাই নয়, বিধানসভা ভোটের পরও প্রতিটি উপনির্বাচনেও বিপুল মার্জিন নিয়ে জিতে চলেছে তৃণমূল। অবশ্য ‘বাংলা ভাগের মতো’ বড় সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে যে মাপের দলীয় সংগঠন থাকতে হয়, তা যে বঙ্গ বিজেপির নেই, তা সংঘ-ঘনিষ্ঠ ওই পত্রিকায় প্রকাশ্যেই স্বীকার করা হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের পর আপাতত ৭০ জন বিধায়কে দাঁড়িয়ে থাকা বিজেপির জনসমর্থন প্রতিদিন হু হু করে নামছে। পুরসভা ভোটের পর সমস্ত উপনির্বাচনেও গোহারা পদ্মশিবির। আর তাই লোকসভা ভোটের মুখে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বিশেষ ব্লু-প্রিন্ট বানিয়ে সংঘ-ঘনিষ্ঠ নেতারা ফের বাংলা ভাগের ছক সাজাতে শুরু করেছে। কারণ, বিগত লোকসভা ও একবছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কিছু আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল, এবার তা সম্ভব হবে না। কারণ, সদ্যসমাপ্ত পুরসভা ভোট ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে অধিকাংশ বুথে তৃতীয় স্থান পেয়েছে পদ্ম প্রতীক।
[আরও পড়ুন: চিকিৎসার ‘গাফিলতি’তে সাপে কামড়ানো শিশুর মৃত্যু, বালুরঘাট হাসপাতালে ধুন্ধুমার]
এরপর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গতবার ফল খারাপ হওয়া উত্তরের তিন জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নেমেছেন। স্বভাবতই প্রবল চাপে থাকা বিজেপি এবার আরএসএসের পুরনো ফর্মুলা নিয়ে বাংলা ভাগের ব্লু-প্রিন্ট সাজিয়ে তুলছে। অবশ্য ‘স্বরাজ্য’ পত্রিকায় এই ব্লু-প্রিন্ট কার্যকর করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সংখ্যায় বেশি এবং তৃণমূল ওই সব উদ্বাস্তুদের ভোটের তাস হিসাবে ব্যবহার করছে। তাই আগামী লোকসভা ভোটে যে গতবারের ফলের পুনরাবৃত্তি হবে না, তা ধরে নিয়েই বিজেপি এবার উত্তরবঙ্গবাসীকে ‘টাইট’ দিতে কাশ্মীরের ধাঁচে কেন্দ্রীয় শাসনে নিয়ে যেতে চাইছে।