সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: হাজার বিতর্কের মাঝেই উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটকে পাশ হয়ে গিয়েছে ‘লাভ জেহাদ’ (Love Jihad) বিরোধী আইন। বাংলায় বিজেপি (BJP) ক্ষমতায় এলে এখানেও সেই আইন কার্যকর করা হবে। ভোটের প্রচারে দুর্গাপুরে এসে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা ওই জোনে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক নরোত্তম মিশ্র। তাঁর এই হুঁশিয়ারি ঘিরে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। পালটা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল, সিপিএমও।
একুশের ভোটে বাংলা জয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সাংগঠনিক অঞ্চলের পর্যবেক্ষক হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়োগ করেছেন অমিত শাহ। তাঁর নির্বাচিত টিমের সদস্যরা প্রায়শই বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলার নানা প্রান্তে এসে দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। চলছে সভা, মিছিলও। সংগঠন আরও মজবুত করার লক্ষ্যে আগেও বেশ কয়েকবার দুর্গাপুরে (Durgapur) ঘুরে গিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র।
[আরও পড়ুন: বিভেদ ভুলে সাহায্য, হালিশহরে নিহত বিজেপি বুথ সভাপতির স্ত্রীকে সরকারি চাকরি মুখ্যমন্ত্রীর]
বৃহস্পতিবার তিনি দুর্গাপুরে সভা করতে গিয়ে একাধিক বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন। তার মধ্যে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এই ‘লাভ জেহাদ’ ইস্যু। এদিন নরোত্তম মিশ্র স্পষ্ট বলেন, ”মধ্যপ্রদেশে আমরা ধর্মরক্ষার স্বার্থে এই আইন এনেছি, যাকে বলা হচ্ছে লাভ জেহাদ। বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে এখানেও আইন লাগু করা হোক, আমি চাই।” তাঁর এই বক্তব্যে একযোগে সুর চড়িয়েছে সিপিএম, তৃণমূল। সুজন চক্রবর্তী থেকে তাপস রায় – কড়া ভাষায় নরোত্তম মিশ্রর নিন্দা করেছেন।
[আরও পড়ুন: শুক্রবারই রাজ্যে আসছে কোভিশিল্ড, জানুন করোনা টিকা সংরক্ষণের খুঁটিনাটি]
ভিন্ন ধর্মে বিবাহ রুখতে বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে লাগু হয়েছে ‘লাভ জেহাদ’ বিরোধী আইন। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। ভিনধর্মে প্রেমের সম্পর্কের পর বিবাহবন্ধনে কেউ আবদ্ধ হলে তাঁকে জোর করিয়ে ধর্মান্তকরণের মতো অভিযোগ উঠছে। আবার কোনও ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় কেউ ধর্মান্তরিত হয়েই প্রেমের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। কোন ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটছে, তা চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব নয় এখনও। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ধর্মান্তকরণের অভিযোগ উঠছে। সেসব রুখতে চালু হয়েছে আইন। কিন্তু বাংলার সংস্কৃতি ভিন্ন। এখানে ভিনধর্মে প্রেম, বিবাহ নতুন কিছু নয়, অনেকটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এসব ঘটনাকে ‘লাভ জেহাদ’এর তকমা দেওয়া হয়নি আগে। কিন্তু সম্প্রতি ভিনরাজ্যের সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ বিজেপি নেতাদের এ ধরনের হুঁশিয়ারি বঙ্গবাসী খুব ভালভাবে গ্রহণ করবেন না বলে মত শাসকদলের নেতাদের।