যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে আচার্যর প্রতিনিধি হিসাবে বিজেপি নেতার অন্তর্ভুক্তি ঘিরে যখন নতুন বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে, তখন ছাত্রীদের প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য করে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ সিনেমা-কাণ্ডে যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীদের আচরণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি মন্তব্য করেন, “ওই মেয়েগুলো ওঁচা, নিম্নস্তরের, বেহায়া মেয়ে৷” দিলীপবাবুর এই মন্তব্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্যে৷
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিচালন সমিতিতে আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর প্রতিনিধি সদস্য হিসাবে জায়গা পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা নরেন্দ্রকুমার সিংহ গৌড়৷ নরেন্দ্র সিং গৌড় বিজেপির চারবারের বিধায়ক৷ পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীও৷ এহেন ঘটনায়, শিক্ষাবিদদের একাংশের অভিযোগ, এ তো শিক্ষায় বিজেপির প্রভাব কায়েমের চেষ্টা৷ তাঁদের বক্তব্য, এই নিয়োগই আসলে দলতন্ত্র কায়েমের প্রথম পদক্ষেপ৷ যা শুরু হচেছ কার্যত রাজভবন থেকে৷ অবশ্য রাজভবন সূত্রের খবর, রাজনৈতিক কারণে নয়, যোগ্যতার জন্যই নরেন্দ্রকুমার সিংহ গৌড়কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে নিয়োগ করা হয়েছে৷ ঘটনা প্রসঙ্গে অবশ্য রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷
পাশাপাশি যাদবপুরের আন্দোলনরত ছাত্রীদের প্রতি বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক ছড়াল রাজনৈতিক মহলে৷ শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে দিলীপ ঘোষ বলেন, “যারা মারছে তারাই আবার বলছে শ্লীলতাহানি হচ্ছে৷ যাদের মান-সম্মানের ভয় আছে তারা ওখানে যায় কেন? ওই মেয়েগুলো ওঁচা, নিম্নস্তরের বেহায়া মেয়ে৷ যারা ইচ্ছে করে গায়ে পড়ে আবার শ্লীলতাহানির কথা বলে৷ এটা আমাদের লজ্জার বিষয়৷”
দিলীপবাবুর এই মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ তীব্র সমালোচনা করেন যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরাও৷ তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি শিক্ষামন্ত্রী৷ বিজেপি নেতার সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ৷ টুইট বার্তায় সূর্যবাবু বলেন, অশালীন মন্তব্য করতে অভ্যস্ত বিজেপি নেতারা যে এ ধরনের কথা বলবেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷
উল্লেখ্য, গত ৬ মে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘বুদ্ধ ইন এ ট্র্যাফিক জ্যাম’ নামে একটি ছবির প্রদর্শনী ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে৷ প্রদর্শনের অনুমতি বাতিলের পরও ক্যাম্পাসে দেখানো হয় সিনেমাটি৷ পাল্টা আরেকটি ছবির প্রদর্শনী করেন পড়ুয়ারা৷ যে ঘটনাকে ঘিরে বচসা থেকে হাতাহাতিতে জড়ায় দু-পক্ষ৷ সেখানেই ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে৷ সেই ঘটনা নিয়েই এদিন দিলীপ ঘোষের গলায় শোনা গিয়েছে এই মন্তব্য৷ পাশাপাশি যাদবপুরে ছাত্রবিক্ষোভ এবং অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের ছাত্রদের আটকে রাখা প্রসঙ্গেও এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন দিলীপবাবু৷ উপাচার্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নিজের অযোগ্যতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন উপাচার্য৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে যা খুশি তাই হচ্ছে৷ উপাচার্যের দায়িত্ব নেই সেগুলো দেখার? উনি একটি বিশেষ সংগঠনের হয়ে কথা বলছেন৷ ঘটনার দিন যাদের ধরা হয়েছিল, তাদের আটকে রাখা হয়৷ মারা হচ্ছিল৷ আমরা খবর পেয়ে সেখানে লোক পাঠাই৷ তখনই একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ তবে উপাচার্য তো নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না৷” যাদবপুর প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি দিলীপবাবু৷ তিনি বলেন, “অধীরবাবু এসে বলেছেন, যাদবপুর কি নরেন্দ্র মোদির বাবার জায়গা! আমি বলছি, যাদবপুর কী অধীর চৌধুরির বাপের জায়গা! কোন সাহসে প্রধানমন্ত্রীকে বড় বড় কথা বলছেন উনি! এটা কারও বাপের জায়গা নয়৷ নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে সিপিএমের হাত ধরেছে৷ আবার বড় বড় কথা বলছে৷” অন্যদিকে রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানোর উপর জোর দিতে চাইছেন৷ রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ও সহ-উপাচার্য আশিসরঞ্জন ভার্মাকে একান্ত বৈঠকে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, বহিরাগত প্রবেশ কলুষিত করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনে পড়ছে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব৷ অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়াতে মন দিক কর্তৃপক্ষ৷